বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অংশীদারদের প্রতি আহবান জানিয়ে যাব: জাতিসংঘ
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানিয়েছেন, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল অংশীদারকে জাতিসংঘ আহবান জানিয়ে যাবে।
সোমবার (২০ নভেম্বর) নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডুজারিক বলেন, "আমরা সব অংশীদার, সরকার, রাজনৈতিক দলকে একটি শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য তারা যা করতে পারে, তা করতে আহবান জানিয়ে যাব।"
ব্রিফিংকালে একজন সাংবাদিক জানান, বিরোধী দলের দমন-পীড়নের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে; এ বিষয়ে জাতিসংঘ কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা জানতে চান তিনি।
প্রত্যুত্তরে ডুজারিক সে কথা বলেন।
আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন রেখে গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ রয়েছে দাবি করে সকল রাজনৈতিক দলকে ভোটে অংশ নেওয়ার আহবান জানান।
তফসিল অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে, তা বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। সেক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমার জন্য ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়েছে এবং প্রচারের জন্য ১৯ দিন সময় রয়েছে। ৩০০ আসনেই ভোট হবে ব্যালট পেপারে।
একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি, সেই সংসদের মেয়াদ আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে।
এদিকে ইসির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে, এই ঘোষণা সংবিধান অনুসারে করা হয়েছে এবং সেভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
কিন্তু তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এর মাধ্যমে দেশকে নিশ্চিত সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, "এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব একথা সম্পূর্ণ অসত্য। আমরা এই বিতর্কিত নির্বাচন কমিশনকে বর্জন করছি। একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কার জন্য এই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে?"
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে প্রত্যাখান করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও।
প্রসঙ্গত, অনেক বছর ধরেই দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল– আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে অচলাবস্থা চললেও, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরম রূপ নেয়।
২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ চলার মধ্যেই তা পুলিশি অ্যাকশনে পণ্ড হয়ে যাওয়ায় পরদিন হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
২৯ অক্টোবর ফখরুলকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। এরপর আমীর খসরু ও মোয়াজ্জেম হোসেন-সহ বিএনপির অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিয়ে কেবল জাতীয় পর্যায় থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহবান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। ইসির তফসিল ঘোষণার আগেই এ চিঠি সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের কাছে পৌঁছে দেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘ-সহ বেশকিছু শীর্ষ আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থাও একই আহবান জানিয়ে আসছে।