হরতাল-অবরোধে সীমিত আকারে হলেও চলছে দূরপাল্লার বাস
চলমান হরতাল-অবরোধের কারণে গত কিছুদিন দিনের অধিকাংশ সময় দূরপাল্লার বেশিরভাগ যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ থাকতে দেখা গেলেও বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৬ষ্ঠ দফা অবরোধের প্রথম দিনে আজ সীমিত আকারে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন রুটে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে দেখা গেছে।
এছাড়া স্বাভাবিক রয়েছে সাভার থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে গণপরিবহন চলাচল।
বুধবার (২২ নভেম্বর) সকালে সাভার বাস স্ট্যান্ড ও নবীনগর দূরপাল্লার বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, গত কিছুদিনের তুলনায় আজ বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৬ষ্ঠ দফা অবরোধের প্রথম দিনের চিত্র কিছুটা ভিন্ন।
বিভিন্ন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সকাল থেকে সীমিত আকারে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন রুটে বেশ কিছু পরিবহনের বাস ছেড়ে গেছে। যদিও যাত্রী সংকট থাকায় ইচ্ছে থাকলেও অনেক ট্রিপ বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
সাভারের শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস-এর কাউন্টার মাস্টার রায়হান হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এখন দিনের বেশিরভাগ সময় অলস কাটাতে হয়। স্বাভাবিক সময়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন রুটে আমাদের অন্তত ৩৫টি ট্রিপ চলত, এখন তা নেমে এসেছে তিন ভাগের এক ভাগে।'
বাস চালানোর প্রস্তুতি থাকলেও যাত্রী না থাকায় অধিকাংশ ট্রিপ বাতিল করতে হয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'যাও কিছু চলে তা রাতে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আর আতঙ্ক বিরাজের কারণে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ দূরযাত্রা করেন না।'
তবে পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে উল্লেখ করে এ পরিবহনকর্মী বলেন, দুপুরে তাদের দুটি বাস গাইবান্ধা ও কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গিয়েছে। এছাড়াও আরও ১০–১২টি বাস বিভিন্ন রুটে চলাচল করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে সকাল থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ-এর সাভার কাউন্টার থেকে ৭টি বাস উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুটে ছেড়ে গিয়েছে। তবে যাত্রী না থাকায় দক্ষিণবঙ্গের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিবহন সংস্থাটির নবীনগর বাস টার্মিনালের দক্ষিণবঙ্গের কাউন্টার মাস্টার জিহাদ টিবিএসকে বলেন, 'যাত্রী না থাকায় বাস ছাড়তে পারছে না কর্তৃপক্ষ।'
সূর্যমুখী পরিবহন-এর কাউন্টার মাস্টার মিন্টু বলেন, 'গত কিছুদিন অবরোধে যাত্রী তেমন একটা ছিল না। তবে আজ সকাল থেকে আমাদের ৪টি বাস অর্ধপূর্ণ যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে।'
নবীনগর বাস টার্মিনালের সাতক্ষীরা লাইন, পূর্বাশা পরিবহন ও স্টার লাইন-এর কাউন্টার মাস্টাররাও যাত্রীর অভাবে গাড়ি না চলার কথা জানান।
এক অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে সাতক্ষীরা যাবেন বলে টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন আসওয়াদ। প্রথমে বাস পাবেন কি না সন্দেহে ছিলেন। পরে ৩টার একটি বাস পান তিনি।
তিনি বলেন, 'এভাবে আর কতদিন। আতঙ্ক আছে কিন্তু তা-ই বলে কতদিন ঘরে বসে থাকা যায়।'
শেখ ওয়াহিদ সস্ত্রীক বরিশালে নিজের বাড়িতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, 'গত সপ্তাহেই যেতাম, কিন্তু যেভাবে বাস পোড়ানো হচ্ছে, ভয় কাজ করছিল। এখনো ভয় আছে, পথে যদি কোনো সমস্যা হয়। তাও কিছু করার নেই, যেতে হবে — জরুরি দরকার।'
'আমরা ভাই রাজনীতি বুঝি না, খেটে খাই। আমাদের দরকার একটু শান্তি,' বলেন ওয়াহিদ।
এদিকে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের মধ্যে বেশ কিছু পরিবহনের বাস আজ চলাচল করলেও সাভার ও নবীনগরে অনেক পরিবহনের বাস কাউন্টার আজও বন্ধ দেখা গেছে।