দাম কমেছে গরুর মাংসের; বেড়েছে ডাল, আটা, চিনির
রাজধানীর কাঁচাবাজারে হঠাৎ করেই কমেছে গরুর মাংসের দাম। দুই সপ্তাহ আগেও যে মাংসের কেজি ছিল ৭৮০-৮০০ টাকা, তা এখন বাজারে ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। ফলে মাংসের দোকানে ভিড় বেড়েছে ক্রেতাদের। ব্যবসায়ীদের মতে, চাহিদা কমে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে গরুর মাংসের দাম কিছুটা কমেছে।
রামপুরা বাজার থেকে কিছুটা এগিয়ে আবুল হোটেলের মোড়ে বড় মাংসের দোকান 'খলিল গোস্ত বিতান', যেখানে দিন-রাত সবসময়ই মাংস বিক্রি হয়। গত ২-৩ দিন ধরে ৬০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি হচ্ছে এই দোকানে।
মাংসগুলোতে দেখা গেল হাড়, চবি ও মাথার মাংস মেশানো হয়েছে। জানতে চাইলে বিক্রেতা শফিকুল জানান, "দাম কমানোর কারণে স্বাভাবিকভাবেই একটু হাড় ও চর্বি বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।"
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা যায়, ৫৮০-৬০০ টাকায় মাংস বিক্রির শুরুটা হয়েছিল বংশালের একটি দোকান থেকে। এটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে অনেক বিক্রেতা দাম কমিয়ে দেন মাংসের। এরপর থেকে রাজধানীর রামপুরা, আদাবর, খিলগাঁওসহ বেশ কিছু এলাকায় মাংসের দোকানে এই দাম অনুসরণ করা হচ্ছে।
বিভিন্ন মাংসের দোকানী ও ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দোকানীরা মাংসের সঙ্গে লেজ, মাথা, পা, ফ্যাপসা, চর্বি ও হাড়গোড় মিলিয়ে বিক্রি করছেন। ভুড়ি ছাড়া বাকি সব মাংস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। তবে যারা মাংস ও হাড়ের নির্ধারিত পরিমাণ (পুরনো পদ্ধতি) মিলিয়ে বিক্রি করছেন, তারা ৭৫০ টাকা কেজি দরই রাখছেন।
মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম টিবিএসকে বলেন, "৭৫০ এবং ৬০০ টাকা– দুটো দামেই গ্রাহক ঠকছেন। ৬০০ টাকায় মাংস যেটা বিক্রি হচ্ছে, সেখানে গ্রাহকের সঙ্গে চরম প্রতারণা করা হচ্ছে। সেখানে সব ধরনের হাড়গোড়, চর্বি সবটাই অতিরিক্ত পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "এ খাতের কিছু সংস্কার করা গেলে ৫০০ টাকার কমে মাংস বিক্রির সুযোগ রয়েছে, যদিও সরকার সেদিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না।"
জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৮ সালে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও সিটি কর্পোরেশন মিলে মাংসের দাম নির্ধারণ করে ৩২০ টাকা কেজি। কিন্তু পরের বছর সমিতির বিভিন্ন সংস্কারের পরামর্শ না শুনে সরকার দাম নির্ধারণ বন্ধ করে দেয়। পরে ২০২০ সালে মাংসের দাম গিয়ে ঠেকে ৬০০ টাকায়; ২০২১-২২ সালে ৭০০ টাকা এবং ২০২৩ সাকে দাম হয় ৮০০ টাকা।
রবিউল আলম জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে গরুর মাংসের কেজি ৫০০ টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব। ব্যবসায়ীদের এখন কেউ মনিটরিং করছে না বলেই দাম এত বেড়েছে বলে তার অভিযোগ।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেক মানুষই এখন মাংস কেনা কমিয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় যখন ৬০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি হচ্ছে, তখন কিছু মানুষ মাংস কেনার চেষ্টা করছেন; বিশেষ করে যারা অনেকদিন মাংস কেনা থেকে বিরত রয়েছেন।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, এভাবে মাংস বিক্রি করে সাময়িক লাভবান হলেও দীর্ঘ মেয়াদে তারা ক্রেতা হারাবে।
"সমিতির পক্ষ থেকে ব্যবাসয়ীদের আমরা জানিয়েছি, তারা যাতে ন্যায্যভাবে ক্রেতাদের মাংস সরবরাহ করেন। এতে মাংসের বিক্রি বাড়বে এবং খামারি ও প্রান্তিক কৃষকরা লাভবান হবেন," যোগ করেন তিনি।
চিনি-ডাল-আটা-ময়দার দাম চড়া
এদিকে গরুর মাংসের দাম কমলেও বেড়েই চলছে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, মসলাসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম। গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে নিত্যপণ্য চিনির।
এছাড়া, শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) রামপুরা, মালিবাগ, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ও মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম। একইসঙ্গে নিম্নমুখী আছে মুরগি ও ডিমের দাম।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোলা বাজারে খোলা সাদা চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়; আর প্যাকেটজাত সাদা চিনি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। এসব চিনির দাম কয়েক সপ্তাহ আগেও ১৪০ টাকার মধ্যে ছিল।
চলতি মাসের শুরুতে মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছিল। মাঝে কয়েক দিন কমে আবার বেড়েছে এখন। বর্তমানে মোটা দানার ডালের কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা এবং ছোট দানা ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, খোলা আটা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, আর খোলা ময়দা ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ৫ টাকা বেশি।