আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে 'অহিংস আন্দোলন' নিয়েই এগোনোর পরিকল্পনা বিএনপি-জামায়াতের
মনোনয়ন দাখিলের তারিখ শেষ হওয়ার পর ক্রমান্বয়ে অসহযোগ আন্দেলন, স্বেচ্ছায় কারাবরণ ইত্যাদি অহিংসা কর্মসূচির মাধ্যমে দেশি-বিদেশে সমর্থন আদায় করে চলমান আন্দোলনে সফলতার প্রান্তে পৌছতে চায় বিএনপি-জামায়াত, দলীয় সূত্র এমনটি নিশ্চিত করেছে।
বিএনপি-জামায়াত সূত্র জানায়, চলমান আন্দোলনকে সরকারের সুক্ষ পরিকল্পনায় আইনশঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে সহিংসতার দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। আন্দেলনকারীদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়ে আন্দোলনকে জনবিচ্ছিন্ন করতে চাচ্ছে, জনমনে ভীতি সঞ্চারও করতে চাচ্ছে।
তারা আরও বলে, আন্দোলনে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যেমে সহিংসতা ঘটিয়ে তা সরকার বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বহির্বিশ্বে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছে। তাই সরকারকে এই সুযোগ দিতে নারাজ বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা সরকার বিরোধী দলগুলো।
সূত্র জানায়, নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিলের শেষ ৩০ নভেম্বরের পর আসতে পারে 'অসহযোগ কর্মসূচি'। পাশাপাশি হরতাল-অবরোধের পরিবর্ততে মাঝেমধ্যে ঢাকায় সমাবেশ, বিক্ষোভ-ইসি ভবন ঘোরওয়ের কথাও ভাবছে দলটি।
বিএনপি-জামায়াতে কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, চলমান আন্দোলনে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনে পক্ষে প্রকাশ্যে-গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছে। এর সাথে রাশিয়া-চীনও বৈশিক রাজনৈতিক কারণে আওয়ামী লীগের পক্ষে সরাসরি অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
তাই বাংলাদেশে গণতন্ত্র উদ্ধারে গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশগুলোর সাহায্য প্রয়োজন। সে জন্য অবশ্যই রাজপথে জনসম্পৃক্ত অহিংস আন্দোলনের বিকল্প নেই।
নির্বাচনের পরেও আন্দোলন জারি থাকতে পারে বলে আভাস দিচ্ছে তারা।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি চলছে। রোববার (২৬ নভেম্বর) ভোর ৬টায় শুরু হওয়া অবরোধ চলবে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত।
রোববার সকালে রাজধানীর শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তান, কাকরাইল, মগবাজার, মহাখালী, উত্তরা, মিরপুর, গাবতলী ও কল্যাণপুর ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের তুলনায় গণপরিবহনের সংখ্যা কম। দুপুরের পর রাজধানীতেও যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যায়। তবে যাত্রী সংকটে দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি।
বিএনপি-জামায়াতের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর থেকে এখন প্রায় ১৯ হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এক সাংবাদিকসহ মোট ১৯ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩৯ জনের অধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থানের সমালোচনায় রিজভী
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবার ভারতের অবস্থানের সমালোচনা করলেন।
রিজভী বলেন, "ভারত সরকার ও তাদের দেশের রাজনীতিবিদদের বোঝা উচিত, বাংলাদেশের জনগণ কেন তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সমর্থন দিয়ে তারা (ভারত) বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।"
রোববার ঢাকার বনানী এলাকায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল ও সমাবেশে বক্তব্যে রিজভী আরও বলেন, "তাদের (ভারত) উচিত বাংলাদেশের জনগণ যা চায়, সেটিকে সমর্থন দেওয়া।"
"ভারত বাংলাদেশের সাথে একতরফা বাণিজ্য চালায় এবং সে দেশে বাংলাদেশি ব্যবসায় বাধা দেয়," অভিযোগ করে তিনি বলেন, ভারত বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি ডলার রেমিট্যান্স আয় করছে।
রিজভী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ সরকার তাদের (ভারত) সবকিছু দিয়েছে, বিনিময়ে কিছুই পায়নি।