বিএনপি বলছে বেইমান, নৌকায় শাহজাহান ওমরকে মানছে না তৃণমূল
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/12/02/shahjahan-omar.jpg)
ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দুইজনকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মী। এরমধ্যে জনবিচ্ছিন্ন সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের মনোনয়ন নিয়েও তৃণমূল খুশি ছিল না। তারপরও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তাকে মেনে নিয়েছিলেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু হুট করেই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমরকে নৌকায় মনোনয়ন দেওয়ায় তৈরি হয়েছে নতুন অসন্তোষ।
হাইকমান্ড শাহজাহান ওমরকে নৌকা প্রতীক দিলেও বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না রাজাপুর, কাঁঠালিয়ার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া বিএনপি থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ফলে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মী পাচ্ছেন না শাহজাহান ওমর, এমন ধারণা পাকাপোক্ত।
কাঁঠালিয়া উপজেলার পাটিখালঘাটা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের কর্মী ইউসুফ সিকদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'শাহজাহান ওমরকে কী দেখে মনোনয়ন দেওয়া হলো, তা বুঝতে পারছি না। তার হাতে নির্যাতনের শিকার হয়নি এমন আওয়ামী লীগের পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না রাজাপুর-কাঁঠালিয়ায়। তিনিই যখন নৌকা প্রতীক পেলেন তখন আমাদের রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।' ওয়ার্ড পর্যায়ের এই নেতা মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানান।
ওই উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী ইব্রাহিম হাওলাদার বলেন, 'সব সময়ে সুবিধার পক্ষে ছিলেন শাহজাহান ওমর। বিএনপির আমলে শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নয়, বিএনপির লোকজনও তার হাত থেকে নিস্তার পাননি। বিএনপির দুঃসময়ে তিনি দল ছেড়ে চলে গেছেন। অথচ রাজনীতিতে আজকের শাহজাহান ওমর বিএনপি দিয়েই হয়েছেন। তিনি বিশ্বাসঘাতক।'
কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বিমল সমাদ্দার বলেন, 'শাহজাহান ওমরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখন অনেক কথা থাকলেও বলা যাবে না। আমরা দলের রাজনীতি করি। দলের জন্য হলেও অনেক কিছু বলা যায় না। তবে আমরা অপেক্ষায় আছি আমাদের নেতা আমির হোসেন আমুর সিদ্ধান্তের। তিনি শেষ পর্যন্ত যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা, তা মেনে নেব।'
রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন বলেন, 'তৃণমূলের নেতাকর্মীরা শাহজাহান ওমরের হাত-পা ধরে বলেছি আপনি বেইমানি করবেন না। আমরা দুঃসময়ে বিএনপির সাথে আছি। আপনি বেঈমানি করলে আমাদের তা দুর্ভাগ্য। আজকের যে শাহজাহান ওমর হয়েছেন তিনি, তা তো বিএনপির হাত ধরেই। সেই বিএনপির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন।'
নাসিম আকন বলেন, উপজেলা বিএনপির ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। তারা সরকার পতনে সর্বাত্মক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মৃধা বলেন, 'বিএনপির শাসনামলে শাহজাহান ওমরের দ্বারা শুধু আওয়ামী লীগ নয়, জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), অর্থাৎ যারাই বিএনপির বিরুদ্ধে ছিলেন, তাদের সবাইকে নির্যাতন, হামলা, মামলা করে নাস্তানাবুদ করেছেন। অনেক লোককে পঙ্গু করে দিয়েছেন। তারপরও যেহেতু কেন্দ্র তাকে নমিনেশন দিয়েছে, সেজন্য অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার নির্বাচন করতে হবে। তার নির্বাচন করার ইচ্ছা আমাদের নেই, তারপরও করতে হচ্ছে।'
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান জিয়া হায়দার লিটন বলেন, দুজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমরা কার পক্ষে কাজ করব, সে বিষয়ে শিগগিরই নির্দেশনা আসবে। আমরা নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট এএইচএম খায়রুল আলম সরফরাজ বলেন, 'আমাদের আসনে টানা তিনবার বজলুল হক হারুন আগের এমপি। তিনি এলাকায় আসেন না, নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। এমনকি বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। এসব কারণে মূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বজলুল হক হারুনের পক্ষে নেই। ওদিকে কেন্দ্র থেকে বিএনপির নেতা শাহজাহান ওমরকে মনোনয়ন দিয়েছে।'
খায়রুল আলম সরফরাজ বলেন, 'বিএনপির আমলে রাজাপুর-কাঁঠালিয়ার এমন কোনো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নেই যাদের নির্যাতন করেননি শাহজাহান ওমর। শাহজাহান ওমর ১৯৯১ সালে আমাকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেছেন। ২০০১ সালের পর তার লোকজন দিয়ে আমার বাড়িঘর লুট করিয়েছেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভয়ংকর রকমের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তার দ্বারা। ফলে মনোনয়ন দিলেও তৃণমূল আওয়ামী লীগ শাহজাহান ওমরকে মেনে নিতে পারছি না।'
তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে জানিয়েছি। শাহজাহান ওমর মনোনয়ন পাওয়ায় ঝালকাঠি ১ আসনের কোন নেতাকর্মী স্বস্তিতে নেই। এক ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছে আওয়ামী লীগের মধ্যে। তার চেয়ে বজলুল হক হারুন ভালো ছিলেন। তিনি এলাকায় না এলেও অন্তত আওয়ামী লীগের লোক ছিলেন। কিন্তু শেষে যা হলো, একজন বিএনপির লোককে যদি আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে মেনে নিতে হয়, এর চেয়ে কষ্ট ও দুঃখের আর কিছু নেই আমাদের।
ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, ঝালকাঠি-১ আসনে দুজনকে আওয়ামী লীগ মনোনয়নপত্র দিলেও বাছাইয়ে একজনের বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিএনপি নেতা হঠাৎ নৌকায় মনোনয়নপত্র দেওয়ার বিষয়টি তৃণমূল কীভাবে নিচ্ছে, প্রশ্ন করা হলে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, 'অনেক কথা থাকলেও নেত্রী যেখানে মনোনয়ন দিয়েছেন; এখন কোনো কথা নেই।'
এর আগে গত ৪ নভেম্বর রাতে ঢাকায় শাহজাহান ওমরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ঢাকার নিউমার্কেট থানার বাসে আগুন দেওয়ার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। প্রায় চার সপ্তাহ কারাবন্দি থাকার পর ২৯ নভেম্বর জামিন পান শাহজাহান ওমর। ওই দিন সন্ধ্যার পরই কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
এর পরদিন বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা দেন। সেই সাথে তাকে ঝালকাঠি-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে বলে জানা যায়। এরপরই মূলত আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়।
উল্লেখ্য, শাহজাহান ওমর ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বাকেরগঞ্জ-১২ (বর্তমানে বিলুপ্ত) আসন থেকে সংসদ সদস্য ছিলেন। এছাড়া ঝালকাঠি-১ আসন থেকে ১৯৯১-১৯৯৬ ও ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন। এরমধ্যে তিনি সেচ, পানি উন্নয়ন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রতিমন্ত্রী, ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।