পাঁচ বছরে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি
সিলেট-৪ আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ। গত নির্বাচনে জিতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। পাঁচ বছর মন্ত্রী থাকাকালে ইমরান আহমদের স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। এই সময়ে বেড়েছে ইমরান আহমদেরও সম্পদ।
ইমরানের স্ত্রী দেশের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বেগম বদরুন্নেসা ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন।
২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্রের সথে জমা দেয়া হলফনামায় নিজের এবং স্ত্রীর সম্পদের বিবরণ দেন ইমরান আহমদ। এতে তিনি উল্লেখ করেন, স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা রয়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬০ টাকা। আর এবারের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় ইমরান আহমদ জানিয়েছেন, স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৮৩ হাজার ৯ টাকা রয়েছে। ফলে এই পাঁচ বছরে স্ত্রীর ব্যাংকে জমাকৃত টাকার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা।
সিলেট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানের কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দুই নির্বাচনের আগে ইমরান আহমদের দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে তার স্ত্রীর ১৬ লাখ ২২ হাজার টাকা মূল্যের একটি সুজুকি গাড়ি ছিল। এবার সেই গাড়ির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ২৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি হার্ড জিপ। পাঁচ বছর আগে ড. নাসরিন আহমদের কোনো কৃষি জমি ছিলো না। এবার তার ৭৫ লাখ ১৮ হাজার ৫৬০ টাকা মূল্যের ১০৫ শতক কৃষি জমি রয়েছে। এছাড়া ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণ, ৫ কাঠা অকৃষি জমি, ছয়তলা ভবনের ২৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে ড. নাসরিনের। অবশ্য এসব পাঁচ বছর আগেও ছিল।
এই পাঁচ বছরে সম্পদ কিছুটা বেড়েছে ইমরান আহমদেরও। পাঁচ বছর আগে তার নামে বাংকে জমা ছিলো ১ কোটি ৫৭ হাজার টাকা। এখন আছে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। চা বাগানের মালিকানার বাইরে পাঁচ বছর আগে অন্যান্য ব্যবসায় তার বিনিয়োগ ছিল ১ লাখ টাকা। এখন বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। মন্ত্রী থাকাকালে তার বাৎসরিক আয় বেড়েছে ১৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮২৮ টাকা। তবে পাঁচ বছরে তার স্থাবর সম্পত্তি অপরিবর্তিতই রয়েছে।
এবার হলফনামায় ইমরান আহমদ ব্যবসা থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩৮০ টাকা। শেয়ার-সঞ্চয়পত্রে আমানত ৩ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টাকা, চাকরি থেকে আয় ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ১৯৬ টাকা, ব্যাংক সুদ থেকে প্রাপ্ত এক লাখ ৬১ হাজার ৪৭৫ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ আছে ৩১ লাখ ৫৫ হাজার ১৯ টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ এক কোটি ৫৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪০৭ টাকা, ৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা শেয়ারে বিনিয়োগ আছে।
স্থাবর সম্পদ রয়েছে পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত কৃষি জমি ৪ দশমিক ৪৭ একর এবং ৪ দশমিক ৫ একর অকৃষি জমি। চা ও রাবার বাগান এবং মৎস্য খামার রয়েছে ইমরানের।
এ ব্যাপারে সোমবার ইমরান আহমদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'ইমরান আহমদ হলফনামার সাথে আয়ের যে কাগজপত্র দিয়েছেন তা নির্বাচন কমিশনের উচিত ভালো করে যাছাই-বাছাই করে দেখা। আয়ের কোন অসংগতি আছে কি না, তা খোঁজ নেয়া প্রয়োজন। তবে বৈধ আয়ের মাধ্যমে কারও সম্পত্তি বাড়লে তাতে আপত্তির কিছু নেই।'
সিলেট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, 'সব প্রার্থীই মনোনয়নপত্রের সাথে হলফনামা জমা দিয়েছেন। আমরা প্রাথমিকভাবে সেগুলো যাছাই-বাছাই করেছি। তবে কারও ব্যাপারে কোনো আপত্তি আসলে তা আবার যাছাই-বাছাই করে দেখা হবে।'