কোনো আঞ্চলিক দলের প্রার্থী নেই বান্দরবান আসনে
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে না ৩০০ নম্বর, বান্দরবান আসনে।
সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) অধিকাংশ নেতাকর্মী গায়েবীর বিভিন্ন মামলায় এলাকাছড়া। কেউ কেউ রয়েছেন আত্মগোপনে। মূল ইউপিডিএফেরও কোনো কমিটি নেই। নেই নেতাকর্মীও। ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নেতাকর্মীরা শহরের দিকে কিছুটা সক্রিয় থাকলেও কোনো উপজেলায় কার্যক্রম নেই তাদের।
তাই এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বান্দরবান আসনটিতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের কার্যত কোনো অংশগ্রহণ নেই।
এ আসনে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা কমিটির নির্বাহী সদস্য ও বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। তিনি এর আগে জাতীয় নির্বাচনে ৬ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ও বোমাং রাজপরিবারে জ্যেষ্ঠ সদস্য মংঞোয়েপ্রু রয়েছেন আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী হিসেবে। তাদের একমাত্র প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির লামা উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা জাতীয় যুব সংহতির আহ্বায়ক এটিএম সামসুল ইসলাম (বাবলু)।
এবারের জাতীয় নির্বাচনে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতির কোনো প্রার্থী না থাকার প্রসঙ্গে দলটির জেলা পর্যায়ের নেতারা জানান, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য একক প্রার্থী ও ভোটার রয়েছে তাদের। কিন্তু বিভিন্ন মিথ্যা ও গায়েবী মামলার কারণে প্রায় সব নেতাকর্মী এলাকাছাড়া রয়েছেন। তাই এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আঞ্চলিক এ রাজনৈতিক দল।
আত্মগোপনে থাকা জনসংহতি সমিতির জেলার এক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে বুধবার দুপুরে কথা হয় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর বান্দরবান প্রতিনিধির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নেতা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, "আমাদের প্রার্থী ছিল। ভোটারও ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গায়েবী মামলা দিয়ে রাখা হয়েছে। সবাই এলাকাছড়া। এখন ভোটের পরিবেশ নেই। শেষ পর্যন্ত এটাও এক ধরনের একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে।"
জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক উ উইন মং মারমা (জলিমং) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এখন ভোটের কোনো পরিবেশ নেই। বান্দরবান আসনে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। সমস্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গায়েবী মামলা দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।"
রাঙ্গামাটি আসনে জনসংহতি সমিতির একক প্রার্থী (উষাতন তালুকদার) রয়েছে উল্লেখ করে উ উইন মং মারমা বলেন, "সেখানেও প্রার্থী প্রত্যাহার শেষদিন পর্যন্ত দেখে বলা যাবে আমাদের দলীয় প্রার্থী থাকবে, কী থাকবে না। পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নকে গুরুত্ব দিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
পার্বত্য চুক্তি বিরোধিতা করে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে রয়েছে অপর আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এর শক্ত অবস্থান রয়েছে খাগড়াছড়ি জেলায়। ইউপিডিএফ এক সময় শহরকেন্দ্রিক কয়েকটি জায়গায় শক্ত অবস্থান তৈরি করেছিল বান্দরবান জেলাতেও। তবে কয়েক বছর আগে বান্দরবান জেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে দলের অবস্থান তুলে ধরে ইউপিডিএফর মুখপাত্র অংগ্য মারমা মুঠোফোনে বলেন, "এই নির্বাচন একপাক্ষিক এবং অনিরপেক্ষ হবে। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। দ্বিতীয় বিষয় হল– তিন পার্বত্য জেলায় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী (সেনাবাহিনী) একটি বড় ফ্যাক্টর। তিন জেলার আওয়ামী লীগ নেতারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর (সেনাবাহিনী) সাথে লিয়াজো করে স্থানীয় বাস্তবতা অনুসারে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আসছে। এলাকাভেদেও স্থানীয় বাহিনী তৈরি করে তাদেরকে ব্যবহার করে থাকে।"
''মূলত এই দুই কারণে আমরা এবারের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছি। এছাড়া, আমাদের নেতাকর্মীরা জেলে আটক রয়েছেন। জামিন পাওয়ার পর আবার তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে এর বাইরে অন্য কোনো দলকেও আমরা সমর্থন দিচ্ছি না," যোগ করেন তিনি।
পার্বত্য চুক্তি বিরোধিতা করে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি নিয়ে আন্দোলনে থাকা ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (মূল ইউপিডিএফ) ভেঙ্গে ২০১৭ সালে সৃষ্টি হয় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) একাংশ। এর প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর ২০২০ সালে গঠন করা হয় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) বান্দরবান ইউনিট।
ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) বান্দরবান জেলার সভাপতি মংপু মারমা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের দল জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো অবস্থানে নেই। তবে নেতাকর্মীরা সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যা নির্দেশনা দেবেন আমরা তাই করব।"
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সাত উপজেলা ও দুই পৌরসভা মিলে মোট ভোটার রয়েছে ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ২৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫৮৩ জন এবং নারী ভোটার রয়েছেন ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৪৪৬ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ১৮২টি।