সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে ফের নির্বাচনে হিরো আলম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও সিদ্ধান্ত বদল করে আবারও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।
আজ রোববার (১৭ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
হিরো আলম বলেন, "আমি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও এখন নির্বাচনে থাকব। এবারও হিরো আলমের ওপর হামলা হবে, মার হবে। তিন দফা নির্বাচন করেছি, তিন দফাই আমাকে মারধর করা হয়েছে।"
একতরফা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আহ্বানে সংবাদ সম্মেলন করা হয় বাংলাদেশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদের ব্যনারে।
এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার ৬ মিনিটের মাথায় হিরো আলম বলেন, "আমি প্রার্থিতা উইথড্রো করবো বলেছি। কেন উইথড্রো করতে চাইছি- এই যে পাতানো নির্বাচন। সারা বাংলাদেশের লোকজন বলে কেউ নির্বাচনে আসছে না, কেন আসছে না? যারা পাতানো নির্বাচন করছে, তারা সুবিধাভোগী আসনগুলো ভাগ করে নিয়ে নির্বাচন করছে। আজকে বলেছিলাম, আমি আর নির্বাচন করবো না ,কারণ এই নির্বাচন করে আমি মার খেয়েছি, লাঞ্ছিত হয়েছি অনেক বার।"
এই বক্তব্যের পরক্ষণেই হিরো আলম বলেন, "নির্বাচন করে কোনো লাভ হবে না; কারণ তারা আসনগুলো আগেই ভাগ করে নিয়েছে। তাই আমাদের এই লোক দেখানো নির্বাচনের মনে হয় না কোনো দরকার আছে। আমি আজকে বলেছিলাম, প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবো। এখন আমি বলছি, আমার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করবো না।"
"আমি প্রার্থিতা উইথড্রো করবো না। আপনারা নিশ্চয়ই বলবেন কেন করবো না? আপনারাই হিরো আলমকে হিরো বানিয়েছেন এবং আপনারাই আবার হিরো আলমকে জিরো বানিয়ে দেন। আপনারাই বলেছেন, হিরো আলম টাকা খেয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছে, মার খাওয়ার ভয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছে। কিন্তু না, আমি এর আগেও নির্বাচন করেছি," যোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে হিরো আলম আরও বলেন, "এই নির্বাচন সরকারের সাজানো নির্বাচন। আমি হিরো আলম নির্বাচনে থাকবো; এই নির্বাচন কত সুষ্ঠু হয়, সেটা দেখবো। প্রতিবারই হিরো আলম মার খায়, এবারও হিরো আলম মার খাবে।"
তিনি বলেন, "নির্বাচনে আমি ফেল করবো এটাও জানি। আপনারা দেখবেন এই নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হয়। যেটা দেখানোর জন্য নির্বাচনে থাকছি। নির্বাচনে থাকছি প্রতিবাদ করার জন্য।"
সংবাদ সম্মেলনে হিরো আলম বলেন, "প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধানমন্ত্রীকে আমরা বলতে চাই, ৩০০ আসনের মধ্যে আপনারা আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী নিলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীও নিলেন। কিন্তু আমরা যারা আমজনতা আছি, তাদের আসন কোথায়?"
বক্তব্যের ৮ মিনিটের দিকে তিনি বলেন, "আমি নির্বাচন যে কোনো সময় বর্জন করতে পারি।"
এদিকে, সম্মেলনে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যন মো. আব্দুর রহিম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "হিরো আলমের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছিল, সেই কারণে তিনি এসেছেন। তবে আজকে তিনি বলছেন, নির্বাচন থেকে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতেও পারেন, আবার নাও পারেন। এটি কোনো নেতা সুলভ কথা না।"
আব্দুর রহিম দাবি করেন, প্রায় ৩০০ স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে, তারা নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন। তারা সবাইকে এ নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন।
আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন।
এর আগে, আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা তিনি।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লেখেন, 'নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যাচ্ছেন হিরো আলম। ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থী উইড্র করবেন তিনি।'
এর আগে, গত ১০ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিলের রায়ে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পান। গত ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যথাযথভাবে পূরণ না করায় হিরো আলমের প্রার্থিতা বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।
এই রায়ের বিপরীতে গত ৬ ডিসেম্বর কমিশনে আপিল আবেদন করেন হিরো আলম। আপিলে তিনি মনোনয়ন ফিরে পান।