নির্বাচন প্রতিহত করতে ‘চূড়ান্ত আন্দোলনের’ দিকে এগোচ্ছে বিএনপি-জামায়াত
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে প্রতিহত করার পরিকল্পনা নিয়ে আন্দোলনের ছকে এগোচ্ছে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী দলগুলো।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনের তফসিল বাতিলে সরকারকে বাধ্য করতে দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াত সূত্র জানায়, আগামী ২৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে 'ফ্যাসিবাদ বিরোধী সর্বদলীয় ঐক্য' মঞ্চের ঘোষণার পর তারা নির্বাচনবিরোধী কর্মসূচি জোরদার করতে পারে।
একটি সূত্র টিবিএসকে জানিয়েছে, চরমোনাই পীর নামে পরিচিত সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বাধীন দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও এক মঞ্চে কর্মসূচিতে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।
ফ্যাসিবাদ বিরোধী সর্বদলীয় ঐক্যে যোগ না দিলেও ইসলামি আন্দোলন অন্তত সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকছে—এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
এছাড়াও নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলে অন্তত ৬৪টি দল সরকারের বিরুদ্ধে জোটগত, যুগপৎ ও নিজ নিজ দলীয় ব্যানারে আন্দোলেনে আছে। তারা সবাই ৭ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন আরও জোরদার করছে।
প্রাথমিকভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে কয়েকটি কর্মসূচি দিয়ে ২৭ ডিসেম্বর থেকে আরও জোরদার কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে দলগুলো। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে থেকেই লাগাতার হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। নির্বাচনের দিন (৭ জানুয়ারি) সারা দেশে হরতালের ডাক দেওয়ারও পরিকল্পনা করছে দলগুলো।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে পর্দার আড়ালে জামায়াত ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সিরিজ বৈঠক চলছে। ইতিমধ্যে আন্দোলন সফল করতে বিএনপি-জামায়াত ঢাকাসহ সারা দেশে ১৫টি সমন্বয় কমিটিও গঠন করেছে।
জামায়াত আমিরের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চূড়ান্ত কথা হয়েছে। এক মঞ্চে আন্দোলনে দুই নেতা একমত হয়েছেন।
কুয়েতের আমির শেখ নাওয়াফ আল আহমদ আল সাবাহ-এর মৃত্যুর কারণে সোমবার দেশে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করায় ওইদিনের পূর্বঘোষিত হরতাল একদিন পিছিয়ে মঙ্গলবার পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা রিজভীর
'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মুক্তি সংগ্রামের নেতা'—ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের এই বক্তব্যের উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, 'ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রতিথযশা সাংবাদিক ও লেখক এম জে আকবর বাংলাদেশে এসে গতকাল এক সেমিনার শেষে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে স্তুতি আর প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন।'
১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এমজে আকবর বলেন, 'অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে দেখছি, তার [শেখ হাসিনা] নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ভালোভাবেই এগিয়ে চলেছে এবং গণতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে। শেখ হাসিনা জাতিকে শুধু উন্নয়নের দিকে নয়, চারটি মাত্রাবিশিষ্ট আধুনিকতার দিকে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশকে যারা নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখাচ্ছে, তারা ভুলে যাচ্ছে যে বাংলাদেশ এখন ভীতু দেশ নয়। ভয় দেখালেই ভয় পাবে, এটা কাজে দেবে না।'
সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী তিনি বলেন, 'এম জে আকবরের মতো একজন প্রাজ্ঞ সাংবাদিক ও রাজনীতিক কী করে সবকিছু জেনেশুনেও একনায়কতন্ত্রের পক্ষে, ১৮ কোটি বাংলাদেশির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বলেন?'
রিজভী বলেন, 'আপনার মন্তব্য বাংলাদেশের জনগণকে অবজ্ঞা করার শামিল। ভারত কি তাহলে বাংলাদেশের জনগণকে উপেক্ষা করে শুধু আওয়ামী লীগকেই বন্ধুত্বের বন্ধনে আঁকড়ে রাখতে চায়?'
এই বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, বিরোধীদলের সদস্যদের ওপর সহিংসতা, মামলা, গ্রেপ্তারসহ সাম্প্রতিক সব ঘটনাই বর্তমান সরকারের পূর্বপরিকল্পিত।