নির্বাচন বানচালে ব্যর্থ হলে, ভোটকেন্দ্র 'ভোটার শূন্য' করতে চায় বিএনপি-জামায়াত
নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কূটনৈতিক মাধ্যমে সরকারের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য সহযোগী বিরোধী দলগুলো।
এ পরিকল্পনার মূল্য লক্ষ্য যেকোনো মূল্যে নির্বাচন প্রতিহত করা। তবে এতে ব্যর্থ হলেও অন্তত নির্বাচনের দিন সারাদেশের সকল ভোটকেন্দ্রে 'ভোটার শূন্য' পরিস্থিতি নিশ্চিত করার ওপর সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে আন্দোলনে থাকা বিরোধী দলগুলোর সূত্রে।
বিএনপি-জামায়াত সূত্র জানায়, একমাত্র কঠোর আন্দোলনেই চূড়ান্ত সফলতা আসবে। আন্দোলনে যেমন সরকার পতনের সম্ভাবনা আছে, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিশ্বের ব্যাপক সমর্থন আদায় করে সরকারের ওপর আরও বৈদেশিক কূটনীতিক চাপ সৃষ্টি করা যাবে। এছাড়াও নির্বাচনের আগে সরকার পতন না হলেও চরম আন্দোলনের ফলে নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র 'ভোটার শূন্য' করা সম্ভব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা টিবিএসকে বলেন, "ভারত ও রাশিয়া যে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিপক্ষে, দেশের জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের বিপক্ষে– তা গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে নগ্ন হয়ে প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, "রাশিয়া ও ভারত যে বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখতে অগণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষ নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে– তাও স্পষ্ট হয়ে গেছে। এখন আশা করি, গণতান্ত্রিক বিশ্ব, বিশেষ করে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশের এ চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলেনে আরও বেশি সমর্থন জানিয়ে অধিকতর সক্রিয় হবে আমাদের সহযোগিতা করতে। ভারত-রাশিয়ার নগ্ন হস্তক্ষেপে আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিশ্বব্যাপী আরও বেশি যৌক্তিকতা পেয়েছে।"
এদিকে, মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের হরতালে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে।
এতদিনে আত্মগোপনে থাকা কিছু সিনিয়র নেতাকেও হরতালের মিছিলে দেখা গেছে। তবে ঢাকা বাইরে দূরপাল্লার যানবাহন কম চললেও রাজধানীতে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
'একতরফা' নির্বাচন করতে চায় সরকার: রিজভী
রাশিয়া ও ভারতের ওপর ভর করে সরকার 'একতরফা' নির্বাচন করার পায়তারা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, "গোটা জাতি এক ভয়ংকর জঙ্গলের মধ্যে বাস করছে। যেখানে চারিদিকে ঘিরে আছে ভয় ও আতঙ্কের দেওয়াল। এই ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করাই হয়েছে একদলীয় ভোট ও ভোটারবিহীন নির্বাচনকে নিশ্চিত করা।"
"সরকার ভাবছে– রাশিয়া আছে, ভারত আছে তাদের সঙ্গে। তাহলে আবার ভয় কীসের? রাশিয়া ও ভারত সমর্থন দিলে কীসের ভোট, কীসের ভোটার, কীসের স্বচ্ছ নির্বাচন?", বলেন তিনি।
রিজভী আরও বলেন, "রাশিয়া ও ভারতের কর্তা ব্যক্তিরা মাঝেমধ্যে বিবৃতি দিচ্ছেন। ভারত-রাশিয়া বাংলাদেশে গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা গণতান্ত্রিক সমাজ গঠিত হোক তা তারা চাচ্ছে না। যে কয়জন কর্তা ব্যক্তিরা এসেছেন, তারা প্রত্যেকেই জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে জনসমর্থনহীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছেন।"
এছাড়া, মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি ঢাকার তেজগাঁওয়ে ট্রেন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে সুপরিকল্পিত নাশকতা হিসেবে উল্লখ করেন।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেনে দুষ্কৃতকারীদের কর্তৃক আগুন চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এটি কূটচাল কি না, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে। এটি সুপরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা। নাশকতাকারীরা মানবসভ্যতার শত্রুপক্ষ, এরা মানবজাতিকেই অস্তিত্বহীন করতে চায়।'
আগুনে ৪ জন যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, শোক ও দুঃখ প্রকাশ এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এই বিএনপি নেতা।
বিএনপি, জামায়াতের বৈঠক
বিএনপি ও জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে 'ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সর্বদলীয় ঐক্য' প্ল্যাটফর্মের ঘোষণার পর দলগুলো তাদের নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচি আরও জোরদার করতে পারে।
গত সপ্তাহে বিএনপি ও জামায়াতের প্রধান নেতারা একের পর এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে করেছেন। এর মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ১৫টি আঞ্চলিক সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দলীয় একাধিক সূত্র।
নতুন কর্মসূচি শুরুর আগে, বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জামায়াতের আমিরের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে।