শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নির্বাচনী ব্যবস্থা: যেসব সংস্কারের প্রতিশ্রুতি থাকছে জাপার ইশতেহারে
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলোসহ কর্মসংস্থান এবং উপজেলা ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ রূপ বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছে জাতীয় পার্টি (জাপা)।
আজ দুপুর ১২টায় জাপা চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দলের পক্ষ থেকে এ ইশতেহার ঘোষণা করবেন। অনুষ্ঠানে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও উপস্থিত থাকবেন।
এবারের ইশতেহারে জাপা নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়গুলোও আনবে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাসরুর মাওলা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বর্তমান শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগের যে দুরবস্থা, সেগুলো সংস্কারের বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা, হাটবাজার ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বেশ কিছু বিষয়ে নতুন কিছু চিন্তা থাকবে যেগুলো নিয়ে অন্য দল হয়তো ভাবেও না।'
কর্মমুখী শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি থাকবে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী ইশতেহারে। এছাড়াও কৃষি ও বাজার মনিটরিংসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তায় বিশেষ আইন করার অঙ্গীকার থাকছে তাদের ইশতেহারে।
জাপা সূত্র জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের রূপরেখা থাকছে দলটির ইশতেহারে।
বিচারব্যবস্থা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, অর্থপাচার রোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের ঘোষণাও থাকবে দলটির ইশতেহারে।
সূত্রমতে, জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের তত্ত্বাবধানে এবারের ইশতেহার চূড়ান্ত করেছে দলটি।
এর আগে পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, এবারের ইশতেহারে এমন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যা বড় রাজনৈতিক দলগুলোও হয়তো ভাবছে না।
গত নির্বাচনে জাপা প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ ১৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিল। তখন ইশতেহারের মধ্যে ছিল, দেশের বিদ্যমান ৮টি বিভাগকে ৮টি প্রদেশে উন্নীত করা, নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধান করা, উপজেলা আদালত ও পারিবারিক আদালতসহ পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা চালু করা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
এছাড়া ধর্মীয় মূল্যবোধকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া, কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে সার, ডিজেল, কীটনাশক সরবরাহ করা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি দমনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করা, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা পদ্ধতি সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টিউশননির্ভরতা কমানো এবং কোচিং ব্যবসা বন্ধ করার কথা দলটির একাদশ নির্বাচনের ইশতেহারে বলা হয়।
দলটির নেতারা বলছেন, এবারেও গত নির্বাচনের অধিকাংশ বিষয় ইশতিহারে থাকছে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের ইশতেহারে মূল ফোকাস থাকবে কর্মসংস্থানে। আমরা চাই উপজেলা কোর্ট ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে। এবং সেই বিবেচনায়ই বিষয়টিকে ইশতেহারে রাখা হবে। প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ উপজেলাগুলোকে শক্তিশালী করেছিলেন, কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেগুলোকে ভেঙে দেয়। আওয়ামী লীগ চালু করলেও এটিকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি।'
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিসহ নাটকীয়তার মধ্যেও প্রায় দুই মাস ধরে গণমাধ্যমের সামনে আসছেন না জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ইশতেহার ঘোষণার দিনও তিনি মিডিয়ার সামনে আসবেন না বলে জানা গেছে। এমনকি দলীয় কার্যালয়ে তিনি উপস্থিত থাকাকালীনও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
এ বিষয়ে জিএম কাদেরের উপদেষ্টা মাসরুর মাওলা টিবিএসকে বলেন, দলের চেয়ারম্যান সব কাজের সাথেই যুক্ত আছেন, শুধু মিডিয়ার সামনে আসছেন না। যখন দরকার হবে, জি এম কাদেরও মিডিয়ার সামনে আসবেন।