মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস: তেজগাঁও স্টেশনের এই ‘রেলওয়ে ম্যান’-এর অন্যদের বাঁচানোর প্রাণান্ত চেষ্টা
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরবেলা। তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন কুয়াশায় ঢেকে আছে। সহকারী স্টেশন মাস্টার পার্বত আলী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের জন্য অপেক্ষা করছেন।
ট্রেনটির গন্তব্য ঢাকা। ছেড়ে এসেছে নেত্রকোণা থেকে। একটু পরে তেজগাঁও স্টেশনে ঢুকবে।
পার্বত আলীর কাছে ওই সকালটা আর দশটা দিনের মতোই ছিল। প্রতিদিনকার সেই একই রুটিন, ব্যত্যয় ঘটার কোনো অবকাশ থাকার কথা নয়।
ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে দূরে কুয়াশা ভেদ করে ট্রেনের ছায়া দেখা গেল। কিন্তু কিছু একটা গণ্ডগোল মনে হচ্ছে।
'প্রথমে ট্রেনটা নজরে এলো; গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। তারপর চিৎকার শুনলাম,' বৃহস্পতিবার বিকেলে স্টেশনের দশদিক সামলাতে সামলাতেই ওইদিনের ঘটনা বর্ণনা করছিলেন পার্বত আলী।
দেখতে দেখতে ট্রেন সামনে এলো, কোচগুলো একের পর এক বেরিয়ে যেতে লাগল। ঠিক মাঝখানের অংশে পার্বতের চোখ আটকে গেল। পরপর তিনটে বগিতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।
'কিছু ভাবারও সময় পাইনি। দৌড় দিলাম কন্ট্রোল রুমের দিকে, ডেঞ্জার সিগন্যাল দিলাম, লাল পতাকাটা নিয়ে ট্রেনের দিকে নাড়াতে শুরু করলাম।'
পরের ঘটনাগুলো পার্বত আবছাভাবে মনে করতে পারেন।
'মাথায় কেবল ছিল কত দ্রুত সামলাতে পারব। ভয় পেয়ে গেছিলাম, কেবল দোয়া করছিলাম। তিনটা কোচে আগুন জ্বলছে, ভেতরে মানুষ পোরা। আগুন ছড়িয়ে গেলে সবাই মারা যাবে,' পার্বত বলেন।
ভোর ৫টা পনেরোয় ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে হাজির হয়। আগুন নেভানো হয় ৫টা ৫০-এ।
সকাল ৬টা ২০ মিনিটে পার্বত 'টিএক্সআর ফিট' ঘোষণা করেন। এর অর্থ ট্রেনটি আবার যাত্রার জন্য প্রস্তুত।
৬টা ২৫ মিনিটের মাথায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে সমর্থ হন পার্বত আলী।
'আমি আমার কাজ করেছি। কিন্তু মানুষ মারা গেছে,' আক্ষেপ নিয়ে বলেন এই রেলওয়েকর্মী।
ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এক মা ও সন্তানসহ মোট চারজন নিহত হন। পার্বত আলী ওই সময় দ্রুত চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা ছিল।