ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আ.লীগের
আসন্ন ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। বিএনপিবিহীন নির্বাচনকে দেশি-বিদেশি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে ভোটার উপস্থিতির বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দলটি কৌশল সাজিয়েছে।
কেন্দ্রের দেয়া কৌশল নিয়ে ইতিমধ্যে মাঠে কাজ শুরু করছেন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারই অংশ হিসেবে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিভিন্ন আসনে দলের মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও তাদের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব নেই দলটির।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ভোটকেন্দ্রভিত্তিক 'ইউনিট কমিটি' গঠনের কার্যক্রম নিয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে সদস্য থাকবেন ন্যূনতম ৩০০ জন। এভাবে সারা দেশে মোট ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রের জন্য কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এসব কমিটিতে কাজ করবেন আওয়ামী লীগের প্রায় দেড় কোটি নেতাকর্মী।
এছাড়াও দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগও ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানো এবং যারা 'নির্বাচনের উৎসব নষ্ট করার' চেষ্টা করবে, তাদের প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে সারা দেশে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য ২০ সদস্যের করে কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানান ছাত্রলীগের সহসভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল। এসব কমিটিতে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ সদস্য থাকবে।
এছাড়া অওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষকলীগ প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য পৃথক কামিটি গঠন করে আওয়ামী লীগের মূল কমিটির সঙ্গে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তিন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
দলের কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী এই কমিটিগুলো নৌকার পক্ষে প্রচার, কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো এবং ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা। একইসাথে বিএনপি-জামায়াতের 'চলমান সহিংসতা' দমনেও সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করবে এই কমিটিগুলো।
এছাড়া প্রচারে এবার সনাতনী ব্যবস্থার পাশাপাশি আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেও কাজ করার প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলো নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন পর্যন্ত চেষ্টা করে যাবে, এমন আশঙ্কা তাদের রয়েছে।
তাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়া ও সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ নেতাদের নিয়ে একটা উপদেষ্টা পরিষদও করেছে আওয়ামী লীগ। ওই পরিষদে এলাকার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন, আলেম সমাজ, নারী স্বাস্থ্যকর্মীসহ এলাকায় যাদের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি রয়েছে তারা থাকবেন।
এছাড়া কেন্দ্রের নারী ভোটারদের জন্য নারীদের নিয়ে পৃথক কমিটি করা হয়েছে।
দলটির নেতারা জানান, ভোটার উপস্থিতির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্যই এবার আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে ছাড় দিয়েছে। বিএনপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ না নিলেও মানুষের সামনে যেন বিকল্প হিসেবে একাধিক প্রার্থী থাকে এবং ভোট নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়, সেজন্যই এটা করা হয়েছে।
এবার দলীয় প্রচারে সরকারের উন্নয়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বেশি বেশি করে আসবে। ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে একইসঙ্গে তরুণ সমাজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
দলের প্রশিক্ষিত নেতাকর্মী ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে হাটবাজার, ধর্মীয় ও সামজিক প্রতিষ্ঠানে গণসংযোগের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি যাবেন ভোট চাইতে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ভোটকেন্দ্রর জন্য ইউনিটভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের নেতারা তাদের উর্ধ্বতন নেতাদের মাধ্যমে প্রতিটি উপজেলা, জেলা, মহানগর নেতাদের কাছে কমিটির তালিকা জমা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রচারকাজ শুরু হওয়ার পরই এই কমিটিগুলো কাজ শুরু করেছে। আশা করা যায় গত ৫ বছরে স্থানীয় সরকার ও উপনির্বাচনগুলোতে যে হারে ভোটার উপস্থিতি ছিল, ভোটকেন্দ্রে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভোটর এবার ভোট দেবেন।
তিনি বলেন, সরকারের টানা ১৫ বছরের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে ভোটারদেরকে নৌকায় ভোট দিতে অকৃষ্ট করতে তারা কাজ করবে।