নৌকার বিপক্ষে ভোটকেন্দ্রে গেলে প্রতিহত করার ঘোষণা ইউপি সদস্যের
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে নৌকার সংসদ সদস্য প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর বিপক্ষে ভোট কেন্দ্রে গেলে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম। তিনি দাবি করেন, "নৌকার প্রার্থী এমপি হয়ে গিয়েছেন। এখন শুধু শপথ গ্রহণের বাকি।"
গত বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়ের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক উঠান বৈঠকে ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম এমন ঘোষণা দেন। বক্তব্যের একটি ভিডিও দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কাছে সংরক্ষিত আছে। বক্তব্যের বিষয়টি খোরশেদ নিশ্চিত করেছেন।
ভিডিওতে কুসুমপুরা ইউনিয়ন স্থানীয় ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, "কারা বিএনপি করে, কারা ঈগল করে- আপনারা সবাই জানেন। কারো ভাই লাগে, কারো চাচা লাগে, কারো নিকটাত্মীয়। আপনারা তাদের বোঝাবেন। কারণ আমাদের মোতাহেরুল ইসলাম (নৌকার প্রার্থী) ইনশাআল্লাহ এমপি। শুধু শপথ গ্রহণ পাঠ হবে।"
"যারা না বুঝে ঈগলের (আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হুইপ সামশুল হক চৌধুরী) পক্ষে কাজ করছেন, তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। ওরা এখনো রঙিন রঙিন স্বপ্ন দেখছেন। পাপ করতে করতে ওরা (ঈগলের সমর্থক) ভারি হয়ে গেছে। তাই তারা এখন ভালো আর মন্দ বুঝছেন না। কোনটা শুভ কোনটা অশুভ বুঝছেন না।"
"আপনারা তাদের বোঝাবেন, ৭ তারিখ (ভোটের দিন) যেন নৌকার বিপক্ষে কেউ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে না দাঁড়ায়। যদি দাঁড়ায়, আমরা আমাদের ব্যবস্থা নেব। কারণ আমি নেতাকে কথা দিয়েছি, এখান থেকে নৌকার বিপক্ষে কেউ যাবে না।"
"এজন্য আমি মামলায় কাউকে আসামী (ঈগলের সমর্থকদের) করিনি। ঘরে পুলিশ পাঠাইনি। নৌকার বিপক্ষে ভোট কেন্দ্রে গেলে, নেতাকে যে কথা দিয়েছি, তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে যাবে। সেদিন আমরা টিনের চশমা পড়বো। সেদিন কাউকে চিনবো না। কঠোর ও শক্ত হাতে প্রতিবাদ করবো। কেউ যদি ঈগলের পক্ষে কাজ করেন, সবাইকে সাথে নিয়ে সেটি প্রতিহত করবো।"
বক্তব্যের এক পর্যায়ে সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য 'আপনারা রাজী আছেন তো'- প্রশ্ন করলে প্রতি উত্তরে সবাই সম্মতি জানান।
বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত ১৫ বছরে নৌকার এমপি হয়ে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন। অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন। এবারও তিনি নৌকার নমিনেশন চেয়ে পাননি। তাই নৌকাকে ডোবানোর চেষ্টা করছেন। এজন্য আমি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলেছি যেন তাদের পরিবারের সদস্যদের বোঝানো হয়। প্রতিহত করা বলতে ব্যালট ভোটের মাধ্যমে জবাব দেওয়া কথা বলেছিলাম।"
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিন ভুঁইয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। এখন যেহেতু শুনেছি, নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।"
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে মোট প্রার্থী হয়েছেন আটজন। আসনটি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী ঈগল প্রতীকে, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন মোমবাতি প্রতীকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এম. এয়াকুব আলী নোঙর প্রতীকে, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কাজি মুহাম্মদ জসীম উদ্দীন চেয়ার প্রতীকে, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ছৈয়দ মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জেহাদী ডাব প্রতীকে, জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নুরুচ্ছফা সরকার লাঙ্গল প্রতীকে এবং তৃণমূল বিএনপির রাজীব চৌধুরী সোনালী আঁশ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।