নিখোঁজ আবু তালহাকে খুঁজতে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন তার বাবা আবদুল হক
আবদুল হকের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান আবু তালহা (২৪) সৈয়দপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। রাজধানীতে বেনাপোল এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ।
আবদুল হক বলেন, "আমার ছেলে সৈয়দপুরের বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং থার্ড ইয়ারে পড়ে। তার বয়স ২৪ বছর। আমার বাড়ি রাজবাড়ি জেলার কালুখালিতে। বর্তমানে ফরিদপুরে থাকি"।
ট্রেনে আগুন লাগার খবর শুনে গতকাল রাতেই ঢাকায় আসেন বেসরকারি একটি ওষুধ প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ষাটোর্ধ্ব আবদুল হক। মুঠোফোনে থাকা ছেলের ছবি নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন এই বাবা।
তিনি বলেন, "আমার ছেলেকে ফরিদপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছিলাম। তার ঢাকা হয়ে সৈয়দপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল"।
রাত ৯টায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনের খবরে তিনি জানতে পারেন ট্রেনে আগুন লেগেছে। ছেলের মুঠোফোনে কল করলে তিনি ফোন বন্ধ পান। তখনই রওনা দিয়ে রাত ১২টার দিকে তিনি ঢাকায় এসে পৌঁছান।
রাত থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মনোয়ারা হাসপাতালসহ চারটি হাসপাতালে ছেলেকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এখনো খোঁজ পাননি। ছেলের ফোনও বন্ধ পাচ্ছেন। সকালে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন তিনি।
তিনি বলেন, "এখানে প্রথমে আমাকে মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। পরে দেখেছি। কিন্তু চিনতে পারছি না। একজন মানুষের উচ্চতা ৩/৪ হাত হলেও সবাই পুড়ে ১/২ হাত হয়ে গেছে", বলেই কাঁদছিলেন আবদুল হক।
তিনি আরও বলেন, "জানি না আমার ছেলে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। আমি আমার ছেলের সন্ধান চাই"।
ট্রেনটি যশোরের বেনাপোল থেকে ঢাকায় আসছিল। সায়েদাবাদ এলাকা অতিক্রম করার সময় ওই ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছার কিছুক্ষণ আগে গোপীবাগ এলাকায় থামানো হয়। আগুনে ট্রেনটির তিনটি কোচ পুড়ে গেছে। দুই নারী, এক শিশুসহ অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়। গতকাল রাত ৯টার দিকে চলন্ত ট্রেনটিতে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।