নির্ধারিত দামে গরুর মাংস বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ীরা
নির্বাচনের আগে ঢাকায় ৬৫০ টাকায় কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিল ব্যবসায়ীরা। যদিও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী ছাড়া বেশিরভাগই ৭০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করেছেন। এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে মাংসের দাম।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) ঢাকায় স্বপ্ন ও মীনাসহ সুপারশপগুলোতে মাংস বিক্রি হয়েছে ৭২০ টাকা থেকে ৭৩০ টাকা কেজিতে। পাড়ার দোকানেও ৭৫০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করেছেন কোনো কোনো বিক্রেতা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, নিরুপায় হয়েই তারা নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করতে পারছেন না। তাদের কথা, নির্বাচন ও বিয়েশাদি কেন্দ্রীক বাড়তি চাহিদার কারণে পাইকারি বাজারগুলোতে গরুর দাম বেড়েছে। এ কারণে তারা নির্বাচনের পরপরই মাংসের দাম বাড়ানোর চিন্তা করছে।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা টিবিএসকে বলেন, 'আমরা দ্রুত মিটিং করে নতুন দাম ঘোষণা করব। বর্তমান দামে মাংস বিক্রি করা সম্ভব নয়।'
এদিকে নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি করতে না পেরে কোনো কোনো ব্যবসায়ী মাংস বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার দোকানই বন্ধ রাখছেন।
বনশ্রীর মাংস দোকানি মো. স্বপন টিবিএসকে বলেন, '১০০ থেকে ১২০ কেজি ওজনের একটি গরু কিনতে হচ্ছে কেজি প্রতি ৭০০ থেকে ৭১০ টাকায়। সেখানে বিক্রয়মূল্য ৬৫০ টাকা। একটি গরু জবাই করলেই কয়েক হাজার টাকা নিশ্চিত লোকসান হচ্ছে। যে কারণে তিনদিন দোকানই বন্ধ রেখেছি।'
গত ৬ ডিসেম্বর মাংসের দাম নির্ধারণের আগে ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে ঢাকায় মাংস বিক্রি হয়েছে। কোথাও কোথাও বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকায়। এ নিয়ে মাংস ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুটি গ্রুপ তৈরি হয় এবং তারা ভোক্তা অধিদপ্তরের এক সভায় হট্টগোল করে। তবে ৬০০ টাকায় মাংস বিক্রি হওয়ায় অনেক সাধারণ মানুষ হুমড়ি খেয়ে মাংস কেনা শুরু করে। বাড়তে থাকে সাধারণ মানুষের মাংস খাওয়া। এ কারণে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়।
এ অবস্থায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ডেইরী ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ঢাকায় একটি সভা করে। সভায় খামারি ও ব্যবসায়ী মিলে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির ঘোষণা দেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত এই দামে মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় তারা। পরবর্তী সময়ে সভা করে গরুর দামের পরিস্থিতি যাচাই করে এই দাম পর্যালোচনার কথা ছিল।
তবে ঘোষণা দিলেও বেশিরভাগ মাংস ব্যবসায়ী শুরু থেকেই ৭০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করছিলেন। এর মধ্যেই অনেককে নির্ধারিত দরে মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই বেশিরভাগ ব্যবসায়ী তাদের মাংসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ঢাকার বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, সেগুনবাগিচা, কারওয়ানবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রামপুরার আবুল হোটেলের পাশে খলিলের মাংসের দোকানে ৫৯০ টাকা কেজি দরে এবং কারওয়ানবাজারের তিন-চারটি দোকানে মূল্য তালিকায় মাংসের দাম কেজি প্রতি ৬৫০ টাকা লেখা দেখা গেছে। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ীকেই আবার ৭০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা বলেন, 'গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। যারাই নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করছেন, তারাই লোকসান গুণছেন। এ কারণে ব্যবসায়ীদের আর নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।'
তিনি বলেন, 'দাম নির্ধারণের আগে ৬২০ টাকা থেকে ৬৩০ টাকা কেজি দরে যে মাংস কিনেছি, সেটা এখন কিনতে হচ্ছে ৭০০ টাকা বা তারও বেশি দাম দিয়ে। অর্থাৎ, ব্যবসায়ীরা একটা গরু জবাই করলে কেজিতে অন্তত ৫০ টাকা লোকসান করছে। এছাড়াও নির্বাচন, বিয়েশাদি কেন্দ্রীক মাংসের বাড়তি চাহিদা তৈরি হওয়ায় গরুর দাম বেড়েছে।'
এদিকে ব্যবসায়ীরা যখন মাংসের দাম বাড়ানোর কথা বলছেন, তখন জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান মাংসের দাম ৫০০ টাকায় নামিয়ে আনার কথা ভাবছেন। গত ১ জানুয়ারি রামপুরার খলিলের মাংসের দোকান পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'খলিল মাংসের দাম কমিয়ে বিক্রি করার পর থেকে বাজারে এক ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে, যা মাংসের দাম কমিয়ে আনতে ভুমিকা রেখেছে। যেখানে নির্ধারিত দাম ৬৫০ টাকা, সেখানে খলিল ৫৯০ টাকায় মাংস বিক্রি করছেন। তার মতো অনেককেই এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।'
তিনি বলেন, 'ফিডের দাম কমিয়ে আনা সহ মাংসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়গুলোতে সফলতা পেলে আগামী তিন-চার মাস, ইভেন রোজার মাসেও ৫০০ টাকার মধ্যে মাংস বিক্রি সম্ভব।'