কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে চালের দাম
বাজারে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে অন্তত পাঁচ টাকা বেড়েছে চালের দাম। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সদ্য শেষ হওয়া বছরে আমন ধানের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। কেবল সিন্ডিকেটের কারণেই চালের দাম বেড়েছে।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানীর কাওরান বাজার, ফার্মগেট, আগারগাঁও, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, ব্রি-২৮ চাল ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, দেশি মোটা চাল ৫০ টাকা, পোলাওয়ের চাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়।
এছাড়া প্রতিটি চালের বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। নানা অজুহাতে মিলাররা বেশি দামে চাল বিক্রি করায় পাইকারি পর্যায়ে গত সপ্তাহে কেজিতে চার থেকে ছয় টাকা বেড়েছে চালের দাম। এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও।
কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. লোকমান হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গত কয়েকদিনে চালের দাম প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। সাধারণত বোরো মৌসুমের চাল বাজারে আসার আগে চালের দাম বাড়ে। কিন্তু এবার হঠাৎ করে আমনের ভরা মৌসুমেই মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। মিলগেটে আমাদের চাল কিনতে হচ্ছে কেজিতে চার থেকে ছয় টাকা বেশি দামে।'
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের খুচরা ব্যবসায়ী সলিমুল হক বলেন, 'তিনদিন থেকে আমাদের দাম বাড়াতে হয়েছে। এখন প্রতি কেজি চালের দাম সর্বনিম্ন পাঁচ টাকা বেড়েছে। আমাদের পাইকারিতেই চার টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।'
আমন মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াই প্রায় শেষের দিকে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ বছর আমনের উৎপাদন আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বাজারে আমনের চাল সরবরাহও হচ্ছে ডিসেম্বরের শুরু থেকে। এ সরবরাহ পুরোদমে থাকলেও এখন মিল, পাইকারি ও খুচরা প্রায় সব পর্যায়ে চালের দাম বাড়ছে।
দেশে মোট চাল উৎপাদনের ৪০ শতাংশ হয় আমন মৌসুমে (নভেম্বর ও ডিসেম্বর)। চলতি আমন মৌসুমে প্রায় এক কোটি ৭১ লাখ ৭৮ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। মোট ৫৮ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর ধানের আবাদ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম খোরশেদ আলম বলেন, '২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়েও হঠাৎ চালের দাম বাড়ানো হয়েছিল। এখন তো চালের ভরা মৌসুম। কিন্তু এখন কেন চালের দাম বাড়বে। এর মাধ্যমে কয়েকদিনে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে একটি চক্র।'
ঢাকার বাইরেও বেড়েছে চালের দাম
সরু চালের সর্ববৃহৎ মোকাম কুষ্টিয়ায় গত এক সপ্তাহে কেজিতে চার টাকা বেড়েছে চালের দাম। ৬২ টাকা কেজির মিনিকেট চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়।
কুষ্টিয়ার খাজানগরে মিলগেটে গত এক সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে বস্তা (৫০ কেজি) প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সে হিসেবে কেজি প্রতি বেড়েছে তিন থেকে চার টাকা।
কুষ্টিয়া পৌর বাজারের মা ট্রেডার্সের চাল বিক্রেতা রিপন বলেন, 'হঠাৎ করে চাল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন কিছু মিল মালিক। সেই সঙ্গে ভরা মৌসুমে দামও বাড়িয়েছেন। ৬২ টাকার মিনিকেট এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়। বেড়েছে মোটা চালের দামও।'
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চালের আড়তগুলোতে গত ১৫ দিনে সব ধরনের চালের দাম পাইকারিতে বেড়েছে অন্তত ১০০ টাকা।
আশুগঞ্জ মোকামের কয়েকজন ব্যাপারী ও চালকল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমন মৌসুমের ধান কাটার আগে ঝড়ের কারণে অনেক জায়াগায় ধানের ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার মণ ধান কেনাবেচা হচ্ছে। যদিও প্রতিদিন চাহিদা রয়েছে প্রায় এক লাখ মণ ধানের।