চট্টগ্রামে প্রধান চারটি সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ
চট্টগ্রামের চারটি বড় সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হওয়ায়— আবারো সংকটের মুখে দেশের কৃষি খাত। ফসল উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে, গ্যাস সংকট ও কারিগরি ত্রুটি– সারের সরবরাহ ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করছে। বর্তমানে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো), চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি (সিইউএফএল) এবং এর ডিএপি-১ ও ডিএপি-২ ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রামের এসব কারখানা থেকে সারাদেশে সার বিতরণ করে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)। বন্দর নগরীতে গ্যাস সংকটের পাশাপাশি কারখানাগুলোয় চলমান কারিগরি সমস্যাকে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
বিসিআইসি'র মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, 'এসব কারখানায় গ্যাস শুধু জ্বালানি হিসেবে নয়, একইসাথে কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। আমাদের কাছে আগামী দুই মাসের জন্য যথেষ্ট সার রয়েছে। এই দুই মাসের মধ্যে গ্যাস সংকট না কাটলে, বাজারে সার সংকট দেখা দেবে। অন্যদিকে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তেমনভাবে সার আমদানিরও সুযোগ নেই।"
তবে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে এবং কারখানার যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ শেষ হলে- পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।
দেশে সার উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখে কাফকো ও সিইউএফএল। কেবলমাত্র কাফকো থেকেই বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন সার দেশের বিভিন্ন গুদামে পাঠানো হয়।
প্রথমে কারিগরি সমস্যার কারণে চট্টগ্রামের কাফকো ও সিইউএফএল এর কারখানাগুলো বন্ধ রাখা হয়, পরে গ্যাস সংকটে ব্যাহত হয় উৎপাদন। এরপরে গ্যাস সরবরাহ শুরু হওয়ার পরে, আবারো কারিগরি সমস্যায় বন্ধ হয় উৎপাদন।
সাধারণত, চট্টগ্রাম থেকে দৈনিক ২ হাজার টন সার দেশের বিভিন্ন স্থানের বাফার গুদামগুলোতে পাঠানো হয়। কিন্তু, উৎপাদনের চলমান সমস্যার কারণে, এই সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে দেশের ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বাজারের সারের স্বল্পতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা, যারা ঋণ নিয়েও জমিতে দেওয়ার জন্য সার কিনতে পারছেন না। এমনকী টাকা দিয়েও সার কেনা যাচ্ছে না, এমন ঘটনা প্রায়ই জানা যাচ্ছে। কৃষকদের জন্য প্রতিকূলতা তাতে আরও বাড়ছে।
ফসল উৎপাদনের জন্য সারের অপরিহার্য ভূমিকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে দেশে রাসায়নিক সারের চাহিদা প্রায় ৫ কোটি ৭৫ লাখ টন।
এর মধ্যে, ইউরিয়া সারের চাহিদা ২ কোটি ৬৫ লাখ টন। অপরদিকে টিএসপি, এমওপি এবং ডিএপি'র চাহিদা হলো যথাক্রমে ৭০ লাখ, ৭০ লাখ এবং ১ কোটি ৬৫ লাখ টন।