আয়ানের মৃত্যু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদন ‘হাস্যকর’: উচ্চ আদালত
সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঁচ বছর বয়সি আয়ান আহমেদের মৃত্যুর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনকে 'লোক দেখানো' (আইওয়াশ) ও 'হাস্যকর' বলে মন্তব্য করেছেন উচ্চ আদালত।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর বেঞ্চ তদন্ত প্রতিবেদনের শুনানির সময় এ মন্তব্য করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক (আইন) ডা. পরিমল কুমার পাল রোববার (২৮ জানুয়ারি) ১৫ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়ান চাইল্ডহুড অ্যাজমার (হাঁপানি) সমস্যায় ভুগছিল। খৎনার অস্ত্রোপচারের আগে ওয়েটিং রুমে শ্বাসকষ্টের জন্য তাকে নেবুলাইজার এবং ইনহেলার দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অস্ত্রোপচারের আগে আয়ানকে সংবেদনহীন করার জন্য প্রোপোফল ইনজেকশন দেওয়া হয়। যার ফলে শ্বাসতন্ত্র সংকুচিত হয়ে শ্বাসনালীর আশপাশের পেশি শক্ত হয়ে খিঁচুনি হতে পারে।
এই বিষয়টি উল্লেখ করে আদালত আয়ানের অপারেশন করা উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেন। হাইকোর্ট বেঞ্চ আরও বলেন, 'কোন চিকিৎসকই রোগীর মৃত্যু চান না। তবে এখানে (তদন্ত প্রতিবেদনে) আয়ানের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবহেলা দেখা যাচ্ছে।'
শিশু আয়ানের খৎনা করানোর সময় যে পরিমাণ ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে, হার্টের বাইপাসেও এত ওষুধ লাগে না বলে মন্তব্য করেন আদালত।
আদালত বলেন, 'দায় এড়ানোর জন্যই তারা (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) এ ধরনের রিপোর্ট দাখিল করেছে। শিশু আয়ানের হাঁপানির সমস্যা থাকার কথা জানার পরও কেন চিকিৎসকেরা অপারেশনের জন্য এত তাড়াহুড়া করলেন?'
শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। অন্যদিকে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে এবিএম শাহজাহান আকন্দ মাসুম এবং ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে আইনজীবী কুমার দেবুল দে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির রিপোর্টকে 'ম্যানিপুলেটেড' উল্লেখ করে আদালতের কাছে এ ঘটনায় পুনরায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চান শাহজাহান আকন্দ মাসুম।
আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ১১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন।
এক রিটের প্রেক্ষিতে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন ২৫ জানুয়ারি দাখিলের নির্দেশ দিয়ে গত ২২ জানুয়ারি আদেশ দেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ১৫ জানুয়ারি রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
রুলের জবাব দিতে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহ সময় দেন আদালত।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এক মাসের মধ্যে সরকার অনুমোদিত ও অননুমোদিত দেশের সব হাসপাতাল-ক্লিনিকের তালিকা জমা দিতেও বলেছিলেন আদালত।
ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ ইউনাইটেড হাসপাতাল ও ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এর দুই চিকিৎসক, অজ্ঞাতনামা পরিচালক, কর্মচারী ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
৩১ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি ইউনাইটেড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় চিকিৎসায় অবহেলার কারণে তার ছেলের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন শামীম।
গত ৩১ ডিসেম্বর আয়ানকে ফুল অ্যানেস্থেশিয়া (জেনারেল) দিয়ে খৎনা করায় সাতারকুল বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অপারেশনের কয়েক ঘণ্টা পরও জ্ঞান না ফেরায় সেখান থেকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয় আয়ানকে। সেখানে সাতদিন পিআইসিইউতে (পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) লাইফ সাপোর্টে রাখার পর ৭ জানুয়ারি (রোববার) মাঝরাতের দিকে আয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।