মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেন আরও ১১৬ বিজিপি সদস্য ও আহত নাগরিক: বিজিবি
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলা সংঘাতের জেরে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যসহ আরও ১১৬ জন পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এ নিয়ে মিয়ানমার থেকে ২২৯ জন পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিল।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, সর্বশেষ তথ্যমতে ২২৯ জন আশ্রয় নিয়েছেন। পালংখালী সীমান্ত দিয়ে আজ এসেছে ১১৪ জন। ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে এসেছে আরও ২ জন। তাদের মধ্যে শুধু বিজিপি সদস্যই নয়, সেনাবাহিনীর সদস্য, কাস্টমস সদস্য ও আহত মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিকও রয়েছে।
তিনি বলেন, 'এ মুহূর্তে ঠিক কতজন আহত রয়েছে বলা যাচ্ছে না। বিজিবি তাদের হেফাজতে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।'
আহত বিজিপি সদস্যদের কক্সবাজারের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান বিজিবির এই কর্মকর্তা।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে সীমান্ত শিবির দখলকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী দলগুলোর সংঘর্ষ চলছে। ক্রমাগত গুলি, মর্টার শেল ও রকেট বিস্ফোরিত হচ্ছে।
মিয়ানমার থেকে আসা গোলায় বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় এক বাংলাদেশিসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
বাংলাদেশের সীমান্তে দুজন নিহত হওয়ার পর স্থানীয়দের মধ্যে ক্রমশ আতঙ্ক বাড়ছে। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর থেকে সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা বেড়ে চলছে। স্থানীয় ঘুমধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ির মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ে সরতে শুরু করেছেন।
গত তিন দিনের সংঘাতের সীমান্ত-লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় গুলি বা মর্টার শেষ পড়লেও সোমবার দুপুরে মৃত্যুর ঘটনা পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।
ঘুমধুম মৈত্রী সড়কের পাশে অবস্থিত নয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের এখানে অনেক বেশি গোলাগুলি চলছে। বিশেষ করে, সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে গোলাগুলির মুহুর্মুহু শব্দ শোনা যাচ্ছে। গুলি এসে বাড়িঘরে পড়েছে। এজন্য পরিবার নিয়ে আমরা এলাকা ছেড়েছি।'
স্থানীয় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'গত তিন দিন আমার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তেমন ঝামেলা হয়নি। তবে আজ সন্ধ্যার পর থেকে অবস্থা বেশি খারাপ। মানুষজন যে যার মতো নিরাপদে চলে গেছে।'
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত শনিবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে ঢেঁকিবনিয়ার পাশে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তুমব্রু রাইট ক্যাম্প দখলকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির সঙ্গে গোলাগুলি শুরু হয়। তুমব্রু রাইট ক্যাম্প সীমান্তচৌকিটি বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যাংছড়ি উপজেলার লোকালয়ের একদম কাছাকাছি।
ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি থেকে বাংলাদেশের লোকালয় প্রায় ৮০০ মিটার দূরে। ঢেঁকিবনিয়া ও ঘুমধুমের মাঝখানে নাফ নদীর সরু একটি শাখা ও প্যারাবন রয়েছে। এ কারণে তুমব্রু রাইট ক্যাম্পে গোলাগুলির সময় বাংলাদেশের বসতঘরে গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে।
সংঘর্ষের জেরে সীমান্ত-লাগায়ো বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
থাইল্যান্ড থেকে প্রকাশিত মিয়ানমারের গণমাধ্যম দ্য ইরাবতীর প্রতিবেদন অনুসারে, গত চার দিনে রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বেশিরভাগ ঘাঁটি আরাকান আর্মি দখল করে নিয়েছে। এ পর্যন্ত সংঘাতে জান্তা বাহিনীর অন্তত ৬২ জন সৈন্য নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) এবং সশস্ত্র সংগঠনগুলো মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চল ও রাজ্য, সাগাইং, মগওয়ে এবং মান্দালয় অঞ্চলের পাশাপাশি কাচিন ও কারেন রাজ্যে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে তাদের হামলা জোরদার করার কারণে এই হতাহতের ঘটনা ঘটছে।