গাবতলীর একমাত্র খেলার মাঠটিও কি দখল হয়ে যাবে?
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গাবতলী মাঠে আনাস, শিহাবসহ ১০-১২ জন শিশু ফুটবল খেলছিল। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন এই মাঠটি এই এলাকার একমাত্র খেলার মাঠ। এটি মিরপুর মাজার রোড এলাকায় অবস্থিত।
কয়েক দশক আগে স্থানীয় এক জমিদার একটি স্কুলকে জমিটি ওয়াকফ করেছিলেন। এলাকার শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য এটিই একমাত্র উন্মুক্ত জায়গা। তবে খেলাধুলার জন্য এখন এই মাঠটিও অবশিষ্ট থাকবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ প্রকৃত মালিকের পরিবার বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ার জন্য এখন জমিটির দখল ফেরত চাইছে।
আনাস মাহমুদ এই মাঠে নিয়মিত খেলাধুলা করেন। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'চার-পাঁচ বছর আগেও মাঠটি আরও অনেক বড় ছিল। বলতে গেলে এখনকার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি আয়তন ছিল মাঠটির। ধীরে ধীরে মাঠের তিন পাশ ঘিরে গাড়ির গ্যারেজসহ বিভিন্ন দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এতে খেলাধুলার জন্য মাঠের জায়গা সংকুচিত হয়ে এসেছে।'
স্থানীয় যুবক টুটুল হোসেন জানান, কভিড-১৯ মহামারির সময়ে মাঠের অর্ধেক জায়গায় এসব দোকানপাট ও গ্যারেজ গড়ে ওঠে।
তিনি টিবিএসকে বলেন, 'আমরা চাই সিটি করপোরেশন এই মাঠের উন্নয়ন করুক এবং এটিকে দখলমুক্ত করে খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত করুক।'
সম্প্রতি ঢাকা ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) গেজেটে মাঠটি একটি উন্মুক্ত জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজুক) তথ্যমতে, ব্যক্তিগত সম্পত্তি হলেও ড্যাপে উল্লিখিত খোলা জায়গায় কেউ কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না।
সরেজমিনে বুধবার দেখা যায়, মাঠের পূর্ব পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে গাড়ির গ্যারেজ, তিন-চারটি একতলা ভবন। উত্তর পাশে মাঠের প্রায় অর্ধেকটা দখলে নিয়ে রাখা হয়েছে পিকআপ, পরিত্যক্ত যানবাহন ও গাড়ির গ্যারেজ। তেলের ড্রাম, গ্যারেজ থেকে নির্গত পোড়া মবিল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মাঠের চারিদিকে। মাঠের পশ্চিম পাশে মেইন রাস্তার পাশ দিয়ে গড়ে উঠেছে ২০ টির মতো পাকা দোকান। পুরো মাঠেই নেই কোনো সীমানা প্রাচীর। চারিদিকে ময়লা-আবর্জনা।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৩১ সালে মুন্সি লাল মিয়া নামে স্থানীয় এক জমিদার মিরপুর সিদ্ধান্ত হাই স্কুলের জন্য জমিটি দান করেছিলেন। তখন থেকেই স্কুল শিক্ষার্থীরাসহ স্থানীয়রা মাঠটি খেলাধুলার জন্য ব্যবহার করে আসছে।
তারা আরও জানান, এই মাঠের আয়তন ছিল এক একরেরও বেশি। এখন এর আয়তন ০.৪০ একরেরও কম।
স্থানীয়দের দাবি, করোনাকালে লকডাউনে এ মাঠে খেলাধুলা না হওয়ার সুযোগে ওয়াকফ স্টেটের দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর আলম বাবলা মাঠের অর্ধেকটা জুড়ে দখলে নিয়ে ভবন নির্মাণ ও ওয়ার্কশপ স্থাপন করেন।
মিরপুর সিদ্ধান্ত হাই স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, মাঠের জায়গা স্কুলের নামে ওয়াকফ করে দিলেও শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা মাঠটিতে খেলাধুলা করত। স্কুল থেকে মাঠের দূরত্ব একটু বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কম যায়। কিন্তু নিয়মিতই মাঠটিতে খেলাধুলা চলে।
তাদের অভিযোগ- ওয়াকফ স্টেটের বর্তমান দায়িত্বে থাকা লোকজন মাঠটিকে দখলে নিয়ে ভবন নির্মাণ করতে চাচ্ছে।
সিদ্ধান্ত হাই স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুজিব সরোয়ার মাসুম টিবিএসকে বলেন, 'মাঠে খেলাধুলা হয় না এমন উল্লেখ করে মামলাও করেও দখলে নিতে চেয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম বাবলা। ওয়াকফ সম্পত্তি হওয়ায় আমরাও বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না।'
জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বাবলা টিবিএসকে বলেন, 'এ মাঠের জায়গা আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি। এখানে আমরা যা সিদ্ধান্ত নেব সেটাই হবে। যদি কারও কাছে কাগজ থাকে নিয়ে আসুক, আমরা ছেড়ে দেব।'
রাজুকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'ড্যাপে উল্লিখিত উন্মুক্ত স্থানের শ্রেণি পরিবর্তন করে কোনো স্থাপনা করা যাবে না। সেই সম্পত্তি যদি ব্যক্তি মালিকানাধীনও হয়, এর পরেও মাঠকে মাঠই রাখতে হবে। গাবতলী মাঠ দখল করে দোকান কিংবা অন্য যে হিসেবেই ব্যবহার হোক না কেন সেটি বেআইনি। ঢাকা সিটির মাঠগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন হলেও পার্টনারশিপের মাধ্যমে এ মাঠের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশন নিতে পারে।'
ডিএনসিসির ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু তাহের বলেন, 'আমরা চাই এ মাঠটির উন্নয়ন করতে। কিন্তু মালিকানা ঝামেলায় আমরা উদ্যোগ নিতে পারছি না। এমনিতেই আমার ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই।'