ব্যাংক পরিচালকের ন্যূনতম বয়স ৩০ বছর নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার ন্যূনতম বয়স ৩০ বছর নির্ধারণ করেছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া কোনো ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর কমপক্ষে ১০ বছরের ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ব্যাংক–কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গঠন এবং পরিচালকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যসংক্রান্ত এক পরিপত্রে এ নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আগে এর কোনো সীমা ছিল না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের জারি করা ২৪ পৃষ্ঠার এই নীতিমালায় পরিচালকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো পরিপত্রটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য যে-সব যোগ্যতা ও উপযুক্ততা নির্ধারণ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে অন্যূন ১০ (দশ) বছরের ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির বয়স ১৮ (আঠারো) বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার কোনো কাজের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নেওয়া হবে না।
ব্যাংক–কোম্পানির পরিচালকদের যোগ্যতা সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হতে পারবেন না কিংবা কোনো জাল-জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বা জড়িত নন, এমন নিশ্চয়তা থাকতে হবে। তাঁর সম্পর্কে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলায় আদালতের রায়ে বিরূপ পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্য থাকতে পারবে না; আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট কোনো নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের বিধিমালা, প্রবিধান, নীতিমালা বা নিয়মাচার লঙ্ঘনের কারণে দণ্ডিত হওয়া যাবে না।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, ব্যাংক–কোম্পানির পরিচালক হতে আগ্রহী ব্যক্তি এমন কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, যার নিবন্ধন বা লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে বা প্রতিষ্ঠানটি অবসায়িত হয়েছে; তাঁর নিজের কিংবা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের জন্য খেলাপি নন।
ব্যাংক–কোম্পানির পরিচালক হতে গেলে অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি বা তেমন কোম্পানিগুলোর কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক বা উপদেষ্টা বা পরামর্শক বা অন্য কোনোভাবে লাভজনক পদে নিয়োজিত থাকা যাবে না। এ ছাড়া তিনি একই ব্যাংক-কোম্পানির বহিঃহিসাব নিরীক্ষক, আইন উপদেষ্টা, উপদেষ্টা, পরামর্শক বা অন্য কোনো লাভজনক পদে থাকতে পারবেন না।
পরিচালকের যোগ্যতা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, তিনি কোনো সময়ে আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হননি; তিনি ব্যক্তিগতভাবে অথবা তাঁর ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বা অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য কর খেলাপি হতে পারবেন না।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক-কোম্পানিতে কোনো পদে চাকরিরত থাকলে চাকরি অবসায়নের পাঁচ বছর অতিক্রম না হলে সেই ব্যক্তি ব্যাংক–কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো ব্যাংক–কোম্পানি কর্তৃক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩–এর আওতায় প্রতিষ্ঠিত কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে তালিকাভুক্ত হলে সেই তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর পাঁচ বছর না পেরোলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন না।
এতে আরও বলা হয়, বোর্ড সভায় একজন পরিচালক উপস্থিতি বাবদ সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা এবং স্বতন্ত্র পরিচালক হাজিরা ফিসহ মাসিক ৫০ হাজার টাকা সম্মানী পাবেন।
এ ছাড়া একটি ব্যাংকের পরিচালক সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ২০ জন এবং স্বতন্ত্র পরিচালক হবেন ৩ জন।
তবে ২০ জনের কম পরিচালক থাকলে দুজনের বেশি স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে পারবেন না।
একই সঙ্গে এক পরিবার থেকে তিনজনের বেশি সদস্য পরিচালক হতে পারবেন না বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত করতে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য উপযুক্ত ও পেশাগতভাবে যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে।
বলা হয়েছে, ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালিত হয় মূলত আমানতকারীদের টাকায়। এক্ষেত্রে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা অপরিহার্য। এ কারণে একটি ব্যাংক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ