কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যু: ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক ও তার স্ত্রী ৪ দিনের রিমান্ডে
গৃহকর্মীর 'অবহেলাজনিত মৃত্যু'র মামলায় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান এ আদেশ দেন বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান। পুলিশ তাদের প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড দাবি করেছিল।
রিমান্ড শুনানিতে সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে বিচারক বলেন, 'বাসাটাতো মৃত্যকূপ বানিয়ে রেখেছেন, জাস্ট মৃত্যুকূপ। আপনাদের ছেলে-মেয়ের সঙ্গেও এমনটা ঘটতে পারত। রিপিটেডলি [বারবার] ঘটনা, এর দায় এড়াতে পারেন না।'
গত ৬ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) ঢাকার মোহাম্মদপুরে সৈয়দ আশফাকুল হকের নয় তলার বাসা থেকে পড়ে মারা যায় ১৫ বছর বয়সি গৃহকর্মী প্রীতি উরাং। এ ঘটনায় পরদিন সকালে মোহাম্মদপুর থানায় আশফাকুল ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে আসামি করে পেনাল কোডের ৩০৪(ক) ধারায় অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা করেন প্রীতির বাবা লোকেশ উরাং।
৭ ফেব্রুয়ারি তাদের গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিলেন।
ওইদিন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম হাসিবুল হক দুই অভিযুক্তের জামিন নামঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে পাঠান এবং পুলিশের পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন নাকচ করে ওই দম্পতিকে তিনদিনের মধ্যে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।
পেনাল কোডের ৩০৪(ক) ধারা অনুযায়ী, কারও বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত কারণে যদি কেউ মারা যান বা আহত হন, তাহলে বিচারে অভিযুক্ত ব্যক্তির সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
আহত প্রীতিকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
ঘটনার পর পুলিশ সাংবাদিকের দুই সন্তানসহ পরিবারের চার সদস্যকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোহাম্মদপুর থানায় নিয়ে যায়। পরদিন দুই সন্তানকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মামলার এজাহারে লোকেশ উরাং বলেন, আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে বছর দুয়েক আগে প্রীতিকে ওই বাসায় কাজে দেন তিনি। এই সময়ে তিনিও মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি, মেয়েকেও বাসার মালিক পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেননি। লোকেশ মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বাড়ির মালিকের সঙ্গে মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলার ওপর নির্ভর করতেন।
বাদী লোকেশ উরাং জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোড এলাকার ২/৭ নম্বর অ্যাপার্টমেন্টের অষ্টম তলা থেকে ফ্ল্যাটের ড্রয়িংরুমের জানালায় সেফটি বার না থাকায় প্রীতি পড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, গত বছর ৪ আগস্ট অনুরূপ আরেকটি ঘটনায় জানালা থেকে পড়ে গিয়ে আরও একজন গৃহকর্মী গুরুতর আহত হয়েছিল।
লোকেশ বারবার এ ধরনের দুর্ঘটনার জন্য বাড়ির মালিক ও বাসিন্দাদের অবহেলা এবং অসতর্কতাকে দায়ী করেছেন। এছাড়া এ ধরনের ঘটনার মূল কারণ হিসেবে জানালায় সেফটি বার না থাকার বিষয়টি জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন তিনি।
এছাড়া মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের তাদের জানালায় সেফটি বারের অনুপস্থিতি এবং এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তির প্রকৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
এর আগে গত বছরের ৬ আগস্ট সৈয়দ আশফাকুল হকের বাড়ির বারান্দা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন আরেক গৃহকর্মী ফেরদৌসী। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় আহত ওই গৃহকর্মীর মা জোসনা বেগম বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর সৈয়দ আশফাকুল হক, তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার ও আসমা আক্তার নামে আরেকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।