বাবা গামছা বিক্রেতা, অর্থাভাবে মেধাবী ছেলের মেডিকেলে ভর্তি অনিশ্চিত
গ্রামের হাট-বাজারে ফেরি করে গামছা বিক্রি করেন ফিরোজ খান। যৎসামান্য সেই আয়ে চলে টানাটানির সংসার। কিন্তু, ছেলে সাব্বিরের লেখাপড়ায় কোনও সহায়তা করতে পারেনি। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া তাঁর ছেলে সাব্বির খান এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় টিকেছে। কিন্তু, ভর্তির টাকা যোগাড় করতে পারছে না। ফলে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে চলছে তাঁর।
এই ঘটনা বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের দামোদরকাঠী গ্রামের ফিরোজ খানের সংসারের।
ফিরোজ জানান, পৈত্রিক ১২ শতাংশ জমির ওপরে আমার বাড়ি। এছাড়া আমার কোন সম্পত্তি নেই। দুই সন্তান আর স্ত্রী নিয়ে এই বাড়িতে থাকি। সাধারণত অন্যের জমিতে কাজ করি। এছাড়া হাটে লুঙ্গি-গামছা বিক্রি করে যা পাই তাতে সংসার চলে। আমার ছেলে সাব্বির প্রাথমিক স্কুল থেকেই খুব মেধাবী। আর ২০২১ সালে হস্তিশুন্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়।
"২০২৩ সালে সরকারি গৌরনদী কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পায়। ওর ইচ্ছায় ধার-কর্জ করে ওকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় পাঠাই। ও কোনদিন কোচিংয়ে পড়েনি। এবার পটুয়াখালী সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। কিন্তু ওকে ভর্তি করানোর টাকা নেই আমার কাছে। ভর্তিতে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা দরকার। আমার ছেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন এখন ভর্তিতেই আটকে আছে"- বলছিলেন তিনি।
তাঁর ছেলে সাব্বির খান বলেন, "৬৭ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়ে আমি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছি। আমার পরিবারের অস্বচ্ছলতায় কোনো কোচিংয়ে পড়ার সুযোগ ছিল না। আমার ছোটবোন তার স্কুল থেকে একটি ট্যাব উপহার পেয়েছিল। সেটি দিয়ে অনলাইনে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ধারণা নিয়েছি। মূলত ইউটিউব থেকে টিউশন নিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। পরীক্ষায় আমি ৪ হাজার ৭৪১তম হয়েছি।"
"ভর্তি পরীক্ষার আবেদন, যাতায়াত সবমিলিয়ে আব্বা একটি এনজিও থেকে ৫ হাজার টাকা ঋণ করে এনেছিলেন। সেই টাকা এখনো শোধ করা হয়নি"- জানান সাব্বির।
উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, "মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া সাব্বির খানের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তার ভর্তির বিষয়ে আমাদের আন্তরিকতা আছে। ভর্তির ব্যাপারে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়কে সার্বিক সহযোগিতা করার অনুরোধ করা হয়েছে।"