‘অজনপ্রিয় প্রার্থী’ কমাতে উপজেলা নির্বাচনে জামানতের পরিমাণ বাড়াল ইসি
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জামানতের পরিমাণ ১০ গুণ ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ১৫ গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে অতিরিক্ত প্রার্থীর অংশ নেওয়া নিরুৎসাহিত করতেই এমন সিদ্ধান্ত।
এতে করে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১ লাখ টাকা ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৫ হাজার থেকে ৭৫ হাজার হবে। এছাড়াও আরও বেশকিছু সংশোধনী প্রস্তাব এনেছে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার নেতৃত্বে গঠিত আইন সংশোধন কমিটি।
গতকাল (মঙ্গলবার) কমিশন সভায় এসব প্রস্তাব অনুমোদন হয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। এদিকে সংশোধনের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ইসি রাশেদা সুলতানাকে বার বার ফোন ও মেসেজ দেওয়া হলেও পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত থাকা একজন কমিশনার জামানত বাড়ানোর কারণ নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, "সবার নির্বাচনে আসা উচিত নয়। কেউ কেউ অপ্রয়োজনে নির্বাচন করে। এটা যৌক্তিক না। হাসির ব্যাপার হয়ে যায়। এতে করে ব্যালট পেপারের সাইজ, নির্বাচনি ব্যয় ও শ্রম বেড়ে যায়।"
দায়িত্বশীল ঐ ব্যক্তি আরও বলেন, "কমিশন চায় যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে তারাই নির্বাচনে আসুক। একটা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হোক।"
সেক্ষেত্রে প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ ভোটের কম পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। বর্তমানে জামানত রক্ষায় প্রার্থীদের প্রদত্ত ভোটের এক-অষ্টমাংশ ভোট পেতে হয়।
পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক সইসহ তালিকা জমা দেওয়ার বিধান বাদ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ঐ কমিশনার বলেন, "ভোট গোপনে দেওয়া হয়। কিন্তু সমর্থনসূচক সইয়ের ক্ষেত্রে ভোটারের পরিচয় ও তিনি কাকে সাপোর্ট করছেন তা সবাই জেনে যায়। এটা ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাই এটা বাদ দেওয়া হচ্ছে।"
তবে এই সিদ্ধান্ত এমন সময় নেওয়া হল, যখন পুরো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন মূলত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়েই হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জানিয়েছে যে, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেবে না। বিএনপিও এই সরকারে অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না।
এছাড়াও সাদা-কালোর পাশাপাশি রঙিন পোস্টার ছাপানোর বিধান ও প্রতীক বরাদ্দের পূর্বেই জনসংযোগ করার বিধান রাখা হচ্ছে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায়। পাশাপাশি এবার অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল করার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
ইসি সচিব জানান, আরও যে-সব প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে, তার মধ্যে আছে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত সময়ে সর্বোচ্চ ৫ জন সঙ্গে নিয়ে জনসংযোগ করতে পারবেন। আগে বিধিমালায় এ বিধান ছিল না।
তবে ইসি সিদ্ধান্ত নিলেও এখনই এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না। এই জন্য কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
জাহাংগীর আলম বলেন, কমিশন সভায় অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেইগুলো ভেটিং শেষে বিধিমালা সংশোধন হবে।
এদিকে আগামী মে মাসে চার ধাপে ৪৮৩টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করবে ইসি। প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ আগামী ৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ১১ মে, তৃতীয় ধাপে ১৮ মে এবং চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ২৫ মে। তবে কমিশন তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এই নির্বাচনের আগেই আইনটি পাশের।
এর আগে ২০১৯ সালে প্রথম বারের মত দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়েছিল। ৪৭৩টি উপজেলায় ৫ ধাপে হওয়া ঐ নির্বাচনে, দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। সেবারের উপজেলা নির্বাচনে অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে কম, ৪০.২২ ভাগ ভোট পড়েছিল।