দেশে কিডনি রোগী তিন কোটি ৮০ লাখ, ‘কিডনি চিকিৎসা বিমা’ চালুর দাবি
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষ কিডনির কোনো না কোনো অসুখে ভুগছেন। কিডনি রোগের শেষ পরিণতি কিডনি বিকল। একবার কিডনি বিকল হয়ে গেলে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় কিডনি সংযোজন অথবা ডায়ালাইসিস। কিন্তু এই চিকিৎসা এতটাই ব্যয়বহুল যে, ১০ শতাংশ কিডনি বিকল রোগী তা বহন করতে পারে না।
এ পরিস্থিতিতে কিডনি রোগীদের চিকিৎসায় 'কিডনি সুরক্ষা বিমা' চালুর দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বেসরকারি সংগঠন কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) আয়োজিত 'কিডনি চিকিৎসায় সমঅধিকার: অর্জনে করণীয়' শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ দাবি জানান।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ।
তিনি বলেন, ''উন্নত দেশগুলোতে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন স্বাস্থ্য বিমার মাধ্যমে হয়। রোগীর পকেট থেকে অর্থ ব্যয় করতে হয় না। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আংশিক খরচ সরকার বহন করে থাকে। আমাদের দেশে 'কিডনি সুরক্ষা বিমা' চালু হলে হয়ত কিডনি রোগীদের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হবে এবং সবাইকে চিকিৎসার আওতায় আনা যাবে।''
যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবনযাপন করলে ৫০-৬০ শতাংশ কিডনি রোগ প্রতিরোধ সম্ভব বলে জানান ডা. এম এ সামাদ।
তিনি বলেন, 'অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম করা, পরিমিত স্বাস্থ্যসম্মত বা সুষম খাবার গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান পরিহার করা, তীব্র মাত্রার ব্যাথার ওষুধ পরিহার করলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।'
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, 'কিডনি ফেইলর (বিকল) হয়ে গেলে অনেক ঝামেলা। তখন ডায়ালাইসিস বা ট্রান্সপ্লান্ট করা ছাড়া উপায় থাকে না। মূলত আনকন্ট্রোল হাইপারটেনশন ও ডায়বেটিস সাইলেন্ট কিলার, এই দুটি রোগের কারণে কিডনি ডিজিজ হয়।'
ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, 'আমাদেরে দেশে হেলথ ইনসুরেন্স নাই, স্বাস্থ্যের জন্য কেউ বাজেট রাখে না। ফলে বড় কোনো অসুখ হলে যাদের টাকা আছে তারা চিকিৎসা করতে পারে, আর যাদের নেই তাদের জমি বিক্রি বা ধার করে চিকিৎসা করতে হয়। ফলে রোগী মারা গেলে বা সুস্থ্য হলেও সারাজীবন পরিবারকে ঋণের বোঝা বহন করতে হয়।'
প্রধানমন্ত্রীকে বলে কিডনি বিমা চালুর বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে চেষ্টা করবেন বলেও জানান এই চিকিৎসক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (এনসিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, 'দেশে তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষ রয়েছেন, যারা বিভিন্ন ধাপে কিনডি রোগে আক্রান্ত। সমঅধিকার যদি চাই, তাহলে বিমা ছাড়া কোনো উপায় নাই। একজন মানুষ চিকিৎসা করতে যেয়ে কেন দেউলিয়া হবে? এটা মেনে নেওয়া যায় না, আমাদের সেদিক নজর দিতে হবে।'
বাংলাদেশ ডায়বেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক একে আজাদ খান বলেন, 'কিডনি রোগ প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ ধর্মীয় নেতাদের কথা শোনেন। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, মসজিদের খুৎবায় ডায়াবেটিস বা বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে বার্তা দিলে কম খরচ বা বিনামূল্যে ভালো ফল পাওয়া যায়। কিডনি রোগের বিষয়েও সচেতনতা বাড়াতে ধর্মীয় নেতাদের কাজে লাগাতে হবে।'
কিডনি ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন উর রশিদ বলেন, 'কিডনি রোগের কোনো সিম্পটম নেই। যখন কারো কিডনির ৮০-৮৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়, তখন সিম্পটম দেখা দেয়। তখন ট্রিটমেন্ট করা ছাড়া উপায় থাকে না। তাই এ রোগ প্রতিরোধে রোগীদের সচেতন হতে হবে। কারো বয়স ৪০ বছর হলেই বছরে একবার ইউরিন টেস্ট করে দেখতে হবে প্রোটিন যাচ্ছে কি না।'