মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের দুর্ভোগ: রিক্রুটিং চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান অভিবাসন মোর্চার
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের দুর্ভোগের জন্য দায়ী এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে অভিবাসী কর্মীদের নিয়ে কর্মরত ২৩টি সংগঠনের মোর্চা– বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম)।
মোর্চাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের পরে যেসব বাংলাদেশি কাজের উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়া গেছেন– তাদের একাংশের দুর্ভোগ গত কয়েক মাস ধরে তারা উদ্বেগের সাথে পর্যবেক্ষণ করছে। এই দুর্ভোগের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সিন্ডিকেশনকে দায়ী করে আগামীতে এ পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিসিএসএম বলেছে, "সিন্ডিকেশনের মাধ্যমে লোকপ্রেরণের যে দূর্ভোগসমূহ বিসিএসএম পূর্বেই চিহ্নিত করে আশংকা প্রকাশ করেছিল– তাই ঘটছে মালয়েশিয়ায় ২০২২ সালে কর্মী প্রেরণের শুরু থেকে। অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় এবং গত কয়েক মাস ধরে কর্মীদের কাজ না পাওয়ার সমস্যাটি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।"
বিসিএসএম মনে করে, সাম্প্রতিক এই ঘটনাসমূহের প্রেক্ষিতে সরকার সিন্ডিকেট ব্যবস্থায় শ্রমিক প্রেরণের কুফল সম্পর্কে সজাগ হবে, এবং ১৯৯৭ ও ২০০৭ সালের মতো ভবিষ্যতে এ ধরণের নিয়োগব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি না ঘটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, "বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়, বর্তমানে কর্মহীন অবস্থায় অথবা বিনা বেতনে কিংবা, স্বল্পবেতনে এবং ঋণগ্রস্থ হয়ে দেশটিতে অবস্থান করছেন প্রায় ১-২ লাখ বাংলাদেশি। আমরা লক্ষ করছি, বাংলাদেশের সিন্ডিকেটভূক্ত কিছু রিক্রুুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ার এমন কিছু কোম্পানিতে কর্মী পাঠিয়েছে যাদের কর্মী নিয়োগের সক্ষমতা নেই, এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওই নামের কোন কোম্পানির অস্তিত্ব নেই।"
"এছাড়াও হাজার হাজার বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়া যাবার জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে লাখ লাখ টাকা দিয়ে রেখেছেন এবং কলিং ভিসা নিয়ে ভিসা ষ্ট্যাম্পিং/ই-ভিসার জন্য মাসের পর মাস ধরে অপেক্ষা করছেন। এমতাবস্থায়, সংশ্লিষ্ট রিক্রুুটিং এজেন্সিগুলোকে ওই দেশের সরকার ও কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিসিএসএম দাবি জানাচ্ছে।"
মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইংকে আরো সতর্কতার সাথে বিভিন্ন কোম্পানির ডিমান্ড লেটার ভেরিফিকেশন ও অনুমোদন করার বিষয়ে দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠার জন্য তাগিদ দেয় অভিবাসন মোর্চাটি । একইসাথে কর্মীরা যদি প্রতারিত হয়– তাহলে উভয় দেশের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তার দায়িত্ব নেয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিবৃতিতে আহ্বান জানানো হয়।
বিসিএসএম উল্লেখ করে, পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে মালয়েশিয়ার সরকার আগামী ৩১ মে, ২০২৪ থেকে বিদেশি কর্মী নেয়া বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশি কর্মীদের চাকরি হারানো, বেতন না পাওয়া, অনিবন্ধিত হওয়া এবং অমানবিক জীবনযাপন ইত্যাদি সমস্যা আরো বাড়বে। এ বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকারকে এখনই এর আশু সমাধানের উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানায় সংগঠনটি।
এছাড়া মোর্চার পক্ষ থেকে চাকরি হারানো, অনিবন্ধিত কর্মী এবং অমানবিক জীবনযাপন করা কর্মীদের বিষয়ে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে অতি দ্রুত সুষ্ঠ সমাধানের জোর দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বিসিএসএম এর চেয়ার ড. তাসনিম সিদ্দিকি এবং কো-চেয়ার সৈয়দ সাইফুল হক।
বিবৃতিদাতা বিসিএসএম সদস্য সংগঠনগুলো হলো—রেফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু), ওয়্যার্বি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক, বাংলাদেশি অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন (বমসা), মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাসুগ, অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ), হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস), ইমা রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অব অল্টারনেটিভ ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন (ইনাফি) বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কন্সট্রাকশন অ্যান্ড উড ওয়ার্কারস ফেডারেশন (বিসিডব্লিউডব্লিউএফ), ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল একশন (ইপসা), বাংলাদেশ অভিবাসী অধিকার ফোরাম (বোয়াফ), বাস্তব, রাইটস যশোর, সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশন্স (ডেভকম) লি., ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশন, চেঞ্জ মেকার্স, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিস (বিআইএলএস), অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিইউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স(সিসিডিএ), বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র (বিএনএসকে)।