বাজার অস্থিতিশীলতায় কর্পোরেটদের দায়ী করলেন খুচরা বিক্রেতারা
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবসায়ী নেতাদের অভিযোগ, বড় বড় কর্পোরেট গ্রুপ কোম্পানির কারণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কর্পোরেট ব্যবাসয়ী প্রতিষ্ঠানগুলো; এসব প্রতিষ্ঠান বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখলেই পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) বিকেলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)-এর উদ্যোগে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর আমদানি, মজুদ, সরবরাহ, মূল্য ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে যৌথ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বনলতা কাঁচাবাজার (নিউমার্কেট) ব্যবসায়ী সমিতি ও নিউ সুপার মার্কেট (উত্তর) ডি-ব্লক দোকান মালিক সমিতি।
সেখানে এফবিসিসিআই'র সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এফবিসিসিআই বাজার মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক মো. আমিন হেলালি প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন।
সভায় নিউ সুপার মার্কেট উত্তর ডি-ব্লক দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, তীর কোম্পানি, ফ্রেশ কোম্পানি যদি বাজারে চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক করে দেয়– তাহলে মার্কেট স্বাভাবিক থাকবে। চিনি, ডাল, তেল– এগুলো সব কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে।
তিনি বলেন, "কোম্পানিগুলো চাল, ডালের দাম নিয়ে যে খেলা খেলছে, এ খেলা আমাদের কাছে না, এ খেলা কর্পোটের কোম্পানির কাছে। আমরা অল্প পরিমাণ কিনে ব্যবসা করি। এসিআই, তীর, স্কয়ার এদের কাছেই সব। স্কয়ারের কাছে মসলা বাজারের বড় গেইম। আমাদের হাতে কিছু নেই।"
"৬০০ টাকা জিরা কিনে প্যাকেট করে বিক্রি করছে ২,২০০-২,৪০০ টাকা," বলেন তিনি।
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার বনলতা মার্কেটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ সফিউল্লাহ বলেন, "বড় প্রতিষ্ঠান জিরা, হলুদগুড়া থেকে শুরু করে ঝালমুড়িও বিক্রি করে। আমাদের কাছে ব্যবসা নেই। এসিআই লিমিটেড ওষুধ থেকে শুরু করে সব বিক্রি করছে। চাল, ডাল,আটা সবই তাদের কাছে পাওয়া যায়। আমি এফবিসিসিআইকে বলবো, তাদের কিছু ব্যবসা কমিয়ে করতে বলার জন্য। খুচরা ব্যবসায়ীদের একটু বাঁচতে দেন, আমরা আর পারছি না।"
তিনি বলেন, "যত জরিমানা আসে সব বাজারে যারা বিক্রি করে তাদের ওপরে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে আজ পর্যন্ত কেউ জরিমানা করেনি।"
নিউ সুপার মার্কেট উত্তর ডি-ব্লক দোকন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের বলেন, "কৃত্রিম সংকট আমাদের জন্য ক্ষতিকর। এমন হলে ব্যবসায়ীরা তখন অসাধু হিসেবে চিহ্নত হয়। প্রথম রমাজান থেকে চিনি, তেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সেগুলোর দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে।"
এদিকে এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এফবিসিসিআই'র সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বাজার মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক মো. আমিন হেলালি বলেন, "বাংলাদেশে এমন কোনো আইন নেই যে আপনি সব ব্যবসা করতে পারবেন না। কারণ তাদের (কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান) ব্যবসা বাণিজ্য আছে, আবার গবেষণা সেলও আছে। গবেষণা সেল গবেষেণা করে বের করে দেন কোন ব্যবসা করলে লাভ বেশি হবে। তারা দেখছে হলুদ, মরিচের গুড়া করে বিক্রি করে লাভ বেশি হবে; তাই তারা ব্যবসা করছে। এতে তাদের তো কোনো দোষ নেই।
"তবে আমরা দেখছি কীভাবে ছোট ব্যবসায়ীরাও টিকে থাকতে পারে। এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানও শুনছে। অবশ্যই আমাদের এই জায়গায় একটি পরিবর্তন আসবে," যোগ করেন তিনি।
আমিন হেলালি বলেন, শুধু ব্যবসায়ী নয়, সব ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতকারী রয়েছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অসৎ উপায়ে ব্যবসা পরিচালনা করলে সরকারের কাছে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, "আরও অনেক কারণে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পায়। অদৃশ্য কারণও আছে, সেইগুলো নিয়েও আলাপ হয়েছে। কারণগুলো আমরা তালিকা করছি। ব্যবসায়ীর মধ্যে কেউ অন্যায় করলে, আইন অমান্য করলে আমাদের নিজেদের স্বার্থেই তাদের চিহ্নত কবরে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধরিয়ে দেব। সরকার যেন ব্যবস্থা নেয়, সেজন্য তাদের নাম প্রকাশ করে দেব।"
এদিকে, রাজধানীর নিউমার্কেট এলকার বনলাতা মার্কেট ঘুরে দেখা যায় ব্রয়লার মুরগী ২২০-২৩০ টাকা কেজি, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি, মসুর ডাল (ছোট দানা, উন্নত) ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যদিও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এসব পণ্যের খুচরা দাম নির্ধারিত করেছে ব্রয়লার প্রতিকেজি ১৭৫.৩০ টাকা, গরুর মাংস ৬৬৪.৯৩ টাকা কেজি, মসুর ডাল ১৩০.৫০ টাকা কেজি।
এ বিষয় সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আমিন হেলালি বলেন, "দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করার পরও মার্কেট পাওয়ায় ব্যসায়ীরা বিক্রি করতে পারছেন।"
কাঁচাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।