ক্যাম্পাসে রাজনীতি পরিচালনায় বুয়েট শিক্ষার্থীদের আলোচনায় বসার আহ্বান ছাত্রলীগ সভাপতির
বুয়েটে এখনই কোনো কমিটি বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়, বরং ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি কীভাবে পরিচালিত হতে পারে– সে ব্যাপারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
আজ (২ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, "আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। আমরা এখনই বুয়েট ক্যাম্পাসে কোনো আনুষ্ঠানিক কমিটি বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘোষণা দিচ্ছি না, বরং আমরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে আলোচনা করতে, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি কীভাবে পরিচালিত হবে– তা নিয়ে সংলাপে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।"
গতকাল (১ এপ্রিল) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
"রাজপথে অধিকার আদায়ের পাশাপাশি ছাত্রলীগ বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির ওপর থেকে আইনগত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য লড়াই করেছে। এটি ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসের একটি টার্নিং পয়েন্ট," বলেন ছাত্রলীগ সভাপতি।
তিনি বলেন, "আমরা বুয়েটকে বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চাই। আমরা শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, বুয়েটের ছাত্র রাজনীতি হবে আধুনিক ও স্মার্ট। এখানে র্যাগিং, গুন্ডামি, হয়রানি বা রক্তক্ষয়ের রাজনীতি থাকবে না। রাজনীতি হবে ছাত্রবান্ধব, বুয়েটকে অন্যতম সেরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।"
সাদ্দাম হোসেন বলেন, বুয়েটে আবারও প্রগতিশীল রাজনীতি আবার শুরু হবে; তবে তা কীভাবে পরিচালিত হবে এবং এর কাঠামো কী হবে– সেটি ঠিক করবেন শিক্ষার্থীরা।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন/বিক্ষোভের প্রতি ছাত্রলীগের পূর্ণ মর্যাদা রয়েছে জানিয়েছে সাদ্দাম হোসেন বলেন, "আমরা বুয়েটের বর্তমান ও সাবেক ছাত্র এবং বুয়েট থেকে পাশ করা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনুরোধ জানাবো, কীভাবে এবং কোন উপায়ে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি পুনরায় শুরু করা যায়– সে বিষয়ে যেন তারা আলোচনা ও সংলাপে অংশগ্রহণ করেন।"
"আমরা বিশ্বের সেরা আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র রাজনীতির কাঠামো বিশ্লেষণ করব এবং বুয়েটের জন্য একটি সমৃদ্ধ ও আধুনিক ছাত্রবান্ধব রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করব," যোগ করেন ছাত্রলীগ সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, "আমরা তাড়াহুড়ো করছি না, এই মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা আনুষ্ঠানিক কমিটি ঘোষণা করার পরিকল্পনা নেই। আমাদের কোনো তাড়াও নেই। একাডেমিক কাজকে বাধাগ্রস্ত করে– এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।"
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ সভাপতি বুয়েটের ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে ৪ দফা কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
এরমধ্যে, ইমতিয়াজ রাব্বির আবাসিক হলের সিট বরাদ্দ বাতিলের দাবিতে বুয়েট শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি; একইসঙ্গে বর্ণবাদ, মৌলিকবাদ ও উগ্র রাজনীতির বিরোধিতায় সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন; ছাত্র ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংলাপ; এবং বুয়েট ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
অবশ্য এসব কার্মসূচি পালনের নির্দিষ্ট কোনো দিন ও সময় ঘোষণা করেননি তিনি।
এর আগে, গত বুধবার মধ্যরাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রবেশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের মুখে ক্যাম্পাসের ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেনের হলের সিট বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রবেশের প্রতিবাদে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাও বর্জন করেন বুয়েটের ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
তবে এর তিনদিন পর সোমবার (১ এপ্রিল) বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রায় দেন হাইকোর্ট। এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ।