প্রতিবন্ধীদের জন্য সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে
সরকার আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দেশের প্রতিবন্ধী মানুষদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও খেলাধুলার সুযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে যেসব প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিষয়ক সেবা দেয় সেগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।
সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সেবা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলেও এসব কাজে বরাদ্দ বিশেষ বাড়ছে না।
এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট, কার্যক্রম ও মূল্যায়ন) মো. নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সরকার সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে। সেখানে প্রতিবন্ধীদের সুবিধা বাড়ানোয় বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।"
এসব বিষয়ে আরো আলোচনার জন্য গত ১৯ মার্চ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ওই সভার কার্যপত্রের তথ্য অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ কর্মসূচি সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে বর্তমান বাজেটের তুলনায় ব্যয় ৩৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৩.৮৫ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের ৩৬ কোটি টাকা থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ৩৯.৭০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে পর্যায়ক্রমে বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
আগুনে পুড়ে যাওয়া ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন ব্যয়ও ২৬ লাখ টাকা বাড়িয়ে ২.৫৯ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জাতীয় বুদ্ধি প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় ২.৩৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪৪.৭৩ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফাউন্ডেশনটি সারা দেশে ৭৪টি স্কুল পরিচালনা করছে।
প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের জন্যও বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয় সারা দেশে বর্তমানে ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র পরিচালনা করছে। এসব কেন্দ্রের জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৮০.৩২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে এখাতে বরাদ্দ রয়েছে ৭৬.১৪ কোটি টাকা।
এছাড়া পাঁচটি সরকারি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর জন্য বরাদ্দ ৮.৮০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৯.৪৫ কোটি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি ৬৪টি সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ ১২ কোটি থেকে বাড়িয়ে ১৩.৩৫ কোটি টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরি করার জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৪৮৪ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এ বিষয়ে প্রকল্প নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ সংশোধিত বাজেটের ৩০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে।
আগামী বাজেটে রংপুর বিভাগের পীরগঞ্জের গোপীনাথপুরে গোলেজা খাতুন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবন এবং থেরাপি সেন্টার নির্মাণের জন্য ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে বলে জানা গেছে।
এছাড়া ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম এন্ড নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজএ্যাবলিটিজ প্রকল্পের (এনএএএনডি) মেয়াদ বাড়ানোরও পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ-২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ৪৬ লাখ। জরিপের ফলাফল নির্দেশ করে, দেশের মোট জনসংখ্যার ২.৮ শতাংশ প্রতিবন্ধী।
এক লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া হয়। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভাতা বাবদ সরকার চলতি অর্থবছরে ১১২.৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে এবং আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকবে। শিক্ষার্থীদের শ্রেণি অনুযায়ী প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত মাথা পিছু ৯০০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক ভাতা দেওয়া হয়।
প্রতিবন্ধী ভাতা বাবদ ব্যয়ের কোন পরিবর্তন নেই। এ খাতে চলতি অর্থবছরে ২৯৭৮.৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী অর্থবছরেও বরাদ্দ একই থাকবে। সরকার প্রত্যেক প্রতিবন্ধীকে মাসিক ৮৫০ টাকা করে ভাতা প্রদান করে।
যা যা পরিকল্পনা থাকছে বাজেটে
• সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ কর্মসূচির জন্য ব্যয় ৩৫ লাখ বাড়িয়ে ৩.৮৫ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছে।
• নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩৯.৭০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে
• প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে জাতীয় ফাউন্ডেশনের জন্য বরাদ্দ ২.৩৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪৪.৭৩ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ফাউন্ডেশন সারাদেশে ৭৪টি স্কুল পরিচালনা করছে।
• বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ করার উদ্দেশ্যে ৪৮৪ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।