বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এফএও'র মানদণ্ড সম্পূর্ণরূপে অনুসরণ করে উৎপাদিত হয় নেসলে বাংলাদেশের পণ্য
বাংলাদেশে উৎপাদিত নেসলের পণ্যগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড এবং স্থানীয় স্পেসিফিকেশন পুরোপুরি ও কঠোরভাবে মেনে চলছে বলে জানিয়েছে নেসলের বাংলাদেশ ইউনিট।
নেসলে বাংলাদেশের লিগ্যাল, আরএসএ অ্যান্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর দেবব্রত রায় চৌধুরী বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'মানদণ্ড অনুসরণ করা নেসলে বাংলাদেশের একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য এবং এ বিষয়ে আমরা কখনই আপস করব না।'
নেসলে বাংলাদেশের কোম্পানি সেক্রেটারি দেবব্রত বলেন, 'আমরা এটাও নিশ্চিত করছি যে, বাংলাদেশে উৎপাদিত আমাদের পণ্য কোডেক্স স্ট্যান্ডার্ড (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিষ্ঠিত কমিশন) এবং স্থানীয় স্পেসিফিকেশনের সঙ্গে পূর্ণ ও কঠোরভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উৎপাদন করা হয়।'
তিনি বলেন, 'আমরা আপনাদেরকে আশ্বস্ত করে বলছি, আমাদের শিশু খাদ্যগুলো শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, খনিজ, আয়রন ইত্যাদির মতো পুষ্টির যথাযথ সরবরাহ নিশ্চিত করে উৎপাদিত হয়।'
দেবব্রত বলেন, এতে ব্যবহৃত চিনির পরিমাণ কমানো নেসলে বাংলাদেশের একটি অগ্রাধিকার।
তিনি বলেন, 'গত পাঁচ বছরে আমরা পণ্যভেদে চিনির পরিমাণ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছি। আমরা নিয়মিত আমাদের পোর্টফোলিও পর্যালোচনা করি এবং পুষ্টি, গুণমান, সুরক্ষা ও স্বাদের সঙ্গে আপস না করে চিনির পরিমাণ আরও কমাতে আমাদের পণ্যগুলো নিয়ে গবেষণা ও সংস্কার অব্যাহত রেখেছি।'
দেবব্রত আরও বলেন, নেসলে বাংলাদেশ আমাদের পণ্যের পুষ্টিগুণের সঙ্গে কোনো আপস করেনি এবং কখনোই আপস করবে না।
তিনি বলেন, 'আমরা প্রতিনিয়ত এসব পণ্যের পুষ্টিগুণ বাড়াতে আমাদের বিস্তৃত গ্লোবাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করি।'
তিনি আরও বলেন, 'নেসলে বাংলাদেশ আমাদের ভোক্তাদের কাছে সেরা পুষ্টি পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা এটি করে আসছি। আমরা সবসময় আমাদের পণ্যে পুষ্টি, গুণগত মান এবং নিরাপত্তার সর্বোচ্চ মান বজায় রাখব।'
সুইজারল্যান্ডের একটি অনুসন্ধানী সংগঠন পাবলিক আই এবং ইন্টারন্যাশনাল বেবি ফুড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (আইবিএফএএন)-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, উন্নত দেশগুলোর তুলনায় দরিদ্র দেশগুলোতে শিশুখাদ্যে ক্ষতিকারক চিনির ব্যবহার বেশি।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশ ও ভারত ঘোষণা দিয়েছে, শিশুদের ওপর অতিরিক্ত চিনির প্রভাব খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরু করবে দুই দেশ।
পাবলিক আইয়ের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নেসলে ইউরোপের দেশগুলোর জন্য যে শিশুখাদ্য তৈরি ও বাজারজাত করছে সেখানে কোন চিনি মেশাচ্ছে না। কিন্তু এশিয়ার দেশগুলো, যেমন ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে যে শিশুখাদ্য সরবরাহ করছে সেখানে চিনি ও মধু মেশানো হচ্ছে। এই তিনটি দেশের মধ্যে আবার বাংলাদেশে এর পরিমাণ বেশি। শিশুদের মুটিয়ে যাওয়া ও অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ এসব উপাদান, এবং এটি আন্তর্জাতিক গাইডলাইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
বাংলাদেশে সেরেলাকে প্রতি ১০০ গ্রামে ৩.৩ গ্রাম চিনিযুক্ত রয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানে এর পরিমাণ ২.৭ গ্রাম করে। তবে চিনির কথা প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকলেও– একারণে শিশুস্বাস্থ্যের যেসব ঝুঁকি তৈরি হতে পারে সে সম্পর্কে কিছু লেখা হয়নি। আরেক জনপ্রিয় ব্র্যান্ড নিডোরও একই অবস্থা।
অথচ যুক্তরাজ্যসহ নেসলের প্রধান ইউরোপীয় বাজারগুলোতে যে শিশুখাদ্য তৈরি ও বাজারজাত করছে, সেগুলোতে কোনো চিনি ব্যবহার করা হয়না। একটু বড় বাচ্চাদের জন্য তৈরি কিছু সিরিয়ালে চিনি থাকে, তবে ছয় মাস থেকে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য তৈরি পণ্যগুলোর কোনোটিতেই চিনি নেই।
পাবলিক আই রিপোর্ট প্রকাশের পরে, নেসলে ইন্ডিয়া লিমিটেডের শেয়ার বৃহস্পতিবার বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে ৫.৪ শতাংশ কমে ২ হাজার ৪০৯.৫৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে
এই কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশের পর কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররাও স্বাস্থ্যকর খাবার উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ কোম্পানির সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডাররা এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবের উপর ভোট দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।