সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে হেলিকপ্টার থেকে পানি ছিটাচ্ছে বিমানবাহিনী
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধারা স্টেশনের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির এলাকায় লাগা আগুন দ্বিতীয় দিনের মতো জ্বলছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি দল। তারা হেলিকপ্টার থেকে বেলা সাড়ে ১২টা থেকে অগ্নিকাণ্ডের বনভূমি এলাকায় পানি ছিটাতে শুরু করেছে।
এর আগে আগুনের খবর পাওয়ার দ্বিতীয় দিনে রোববার (৫ মে) ভোর থেকে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকাল ৬টা থেকে ৬টি ফায়ার পাম্পের মাধ্যেমে রিলে সিস্টেম বজায় রেখে সুন্দরবন সংলগ্ন খাল থেকে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করা হয়। পাম্প বসানোর মতো কোনো জায়গা না থাকায় নৌকাতেই পাম্প বসিয়ে আগুন নেভানোর কাজ চালানো হয়।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৫৫ জন ও প্রায় ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেন।
এছাড়াও জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী ও জেলা পুলিশের সদস্যরাও আগুন নেভানোর কাজে বিশেষভাবে নিয়োজিত ছিলেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের আগুন নেভানোর জন্য বিমান বাহিনীর দু'টি হেলিকপ্টার যোগ দেয়। সকালে বিমান বাহিনীর বেল ২১২ হেলিকপ্টার ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে ঢাকা থেকে সুন্দরবনে এসে পৌঁছায়। তারা পর্যবেক্ষণ শেষে ৮টা ৫মিনিটে ফিরে যায়। এরপর এমআই ১৭ নামে আরও একটি হেলিকপ্টার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে রওনা দেয়। এমআই১৭ মূল আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যায়।
এ অভিযানে অংশ নিয়েছেন বিমানবাহিনীর ১৭ জন সদস্য। আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উইং কমান্ডার রাজীব। তাদের সহযোগিতায় বনবিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি যোগ দেয় কোস্টগার্ড ও নৌ বাহিনীর দুটি আলাদা দল।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, এটি একটি বুশ ফায়ার। বিভিন্ন অংশে বিচ্ছিন্নভাবে এখনও আগুন ছড়িয়ে আছে। আগুনের ব্যাপ্তি প্রায় দুই বর্গ কিলোমিটার। এখনও ধোঁয়া উড়ছে। পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা ও চলাচলের রাস্তা দুর্গম হওয়ায় আগুন নেভানোর কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন নিরাপত্তাজনিত কারণে রাতে অগ্নিনির্বাপন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। আগামীকাল সোমবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে আবারও কার্যক্রম শুরু করা হবে।
মোরেলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম তারেক সুলতান বলেন, বেলা সাড়ে বারোটা থেকে বিমানবাহিনী হেলিকপ্টারে করে পানি দেওয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের কাজ সহযোগিতা করছে বন বিভাগ, স্বেচ্ছাসেবক, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা। আগুন এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় আছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে আগুন অন্তত ৩ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। বনাঞ্চলের ঝুঁকি বিবেচনায় রাতে অগ্নিনির্বাপণ কাজ স্থগিত থাকলেও রোববার সকাল থেকে আবারও কাজ শুরু করেছে বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় বাসিন্দা ও সেচ্ছাসেবকরা।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, 'আগুন নির্বাপণে সকাল থেকে সম্মিলিতভাবে আবারও কাজ শুরু করেছি। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেবকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।'