নতুন জাতীয় গাইডলাইন প্রকাশ: তাপপ্রবাহে শিশুর অপরিণত জন্মের সম্ভাবনা বেড়ে যায়
প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাবৃদ্ধিতে অকালে সন্তান জন্মদানের আশঙ্কা ৫ শতাংশ বেড়ে যায়। তাপপ্রবাহের সময় এ ধরনের প্রসবের সম্ভাবনা স্বাভাবিক তাপমাত্রার সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ বাড়ে। অর্থাৎ তীব্র গরমের ফলে সন্তানের অপরিণত জন্মের ঝুঁকি রয়েছে। নতুন জাতীয় নির্দেশিকায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশে অকালে সন্তান জন্মহার ১৬ দশমিক ২ শতাংশ যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে অকালপ্রসবের আশঙ্কা আরও বেড়ে গেছে।
ইউনিসেফের সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোববার (৫ মে) এক অনুষ্ঠানে তাপমাত্রাজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে গর্ভবতী নারীসহ শিশু ও দুর্বল জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করার জন্য একটি জাতীয় গাইডলাইন চালু করেছে।
উচ্চ তাপমাত্রাজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে একটি বিস্তৃত পরিকাঠামো সমৃদ্ধ এ নির্দেশিকাটি স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য খাতের বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া গাইডলাইনটিতে ইউনিসেফের 'বিট দ্য হিট' ফ্রেমওয়ার্কও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটির আওতায় রয়েছে:
- হিটস্ট্রোক সম্পর্কে জানুন এবং নিজের খেয়াল রাখুন;
- হিট স্ট্রেসের লক্ষণগুলো সহজে বুঝুন;
- নিজেকে ও অন্যদের রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিন;
- মারাত্মক লক্ষণ দেখা দিলে, যেতে হবে হাসপাতালে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, 'শিশু, বয়স্ক এবং যারা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত তারা এ তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
'এ তাপপ্রবাহ এবারই শেষ নয়। আগামী বছরগুলোতেও এমন গরম আবার আসতে পারে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইনটি খুবই সময়োপযোগী।'
গাইডলাইনের নির্দেশিকাগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে সকল সরকারি হাসপাতালে এ গাইডলাইন প্রেরণ করা হয়েছে এবং চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
'এ বইয়ের নির্দেশিকাগুলো লিফলেট আকারে স্কুল-কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দিতে হবে,' বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
নগর পরিকল্পনাবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমরা দেখি গ্রামের চেয়ে ঢাকা শহরে তাপমাত্রা অনেক বেশি। এর কারণ, আমরা ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে ঢাকা শহরের গাছপালা সব কেটে সাবাড় করে ফেলেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর হয়তো আমরা খুব প্রভাব ফেলতে পারি না। কিন্তু নগর পরিকল্পনার সময় যদি এসব বিষয় আমরা মাথায় রাখি, তাহলে অনেকাংশে পরিত্রাণ সম্ভব।'
'প্রতিটি শিশুরই একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অধিকার রয়েছে। আর এক্ষেত্রে আমাদের সকলেরই একটি ভূমিকা রয়েছে। তাপজনিত অসুস্থতা মোকাবিলা করে এবং চিকিৎসা পেশাজীবীদের দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের শিশুদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করতে সাহায্য করতে পারি,' বলেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট।
ইউনিসেফের সাম্প্রতিক অনুমান অনুসারে, ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের তিন কোটি ৫৫ লাখ — যা ওই সময়ের মোট শিশু জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশ — ঘনঘন উচ্চ তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হবে। ওই সময় দেশে বছরে গড়ে সাড়ে চারটি বা তার বেশি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে সংস্থাটি।
২০২০ সালে দেশে মোট শিশু জনগোষ্ঠীর ৫ শতাংশ তথা দুই কোটি ৬০ লাখ শিশু এ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছিল।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুহার বেড়েছে।
২০২৩ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে ৩৩ শিশু মারা গিয়েছিল। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩১।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী, গর্ভাবস্থার ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগে শিশু [জীবিত] জন্ম নিলে তাকে অপরিণত জন্ম হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
অকালপ্রসব নবজাতকের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। কারণ মস্তিষ্ক, ফুসফুস এবং লিভারের মতো অনেক অঙ্গ গর্ভাবস্থার শেষ সপ্তাহগুলোতেও বিকশিত হয়। অপরিণত জন্ম হওয়া একটি শিশুকে উষ্ণ রাখতে বা খাওয়াতে সমস্যা হতে পারে। এছাড়া পরবর্তী জীবনে বিলম্বিত বিকাশের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।