এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন: অন্তবর্তী সময়ে বিদেশি ঋণে বিশেষ সুবিধা চায় বাংলাদেশ
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের অন্তর্বতী সময়ে আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে নমনীয় ঋণের সুযোগ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।
বোরবার ঢাকার একটি হোটেলে 'ফার্স্ট ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ঢাকা'— শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সংলাপের প্রথম দিনের 'পার্টনারশিপ ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট' সেশনে এ প্রস্তাব দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ।
এসময় তিনি নমনীয় ঋণের পরিমাণ, দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের শর্ত যেমন— সুদহার কমানো, পরিশোধের সময় বৃদ্ধি এবং ঋণের বিভিন্ন ফি কমানোর প্রস্তাবও দেন। একইসঙ্গে জলবায়ু অর্থায়ন বাড়ানোর কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, "কোভিড পরিবির্তী সময়ে বাংলাদেশ, ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব পরিস্থিতি এখন আগের মতো নেই। এ কারণে এলিডিসি গ্র্যাজুয়েশনে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এতে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের সমর্থন প্রয়োজন।"
এ সময় সেশনে উপস্থিত ছিলেন— বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুয়েন লুইস, বাংলাদেশে ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান চার্লস হুইটলি প্রমুখ।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, "নমনীয় ঋণের প্রচেষ্টা বাংলাদেশের জন্য ভালো উদ্যোগ। এটা প্রসংশনীয়। বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণে জিডিপি মাত্র ১৬ শতাংশের মতো। বাংলাদেশে নমনীয় ঋণের চেষ্টা করছে, যখন দেশটি উন্নত দেশ হতে চায়। বাণিজ্যি বৃদ্ধি লজিস্টিক সহায়তা বাড়াতে বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের বিনিয়োগ টেকসই হবে।"
জলবায়ু অর্থায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, "এটি খুবই ভালো বিষয় এবং আমি এর সাথে সম্পূর্ণ একমত। জলবায়ু অর্থায়ন ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশকে যথাসম্ভব সহায়তা করা উচিত।"
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, "আমাদের এখন বৈদেশিক সহায়তা নির্ভারতা থেকে বের হয়ে ট্রেড-নির্ভর হতে হবে। উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নমনীয় ঋণের পরিমাণ কমছে। এ সময় রাজস্ব বৃদ্ধি এবং রপ্তানি বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। তাহলে বৈদেশিক ঋণ আমাদের ওপর চাপ তৈরি করবে না।"
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশে ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান বলেন, "আমরা প্রত্যাবাসনকে অগ্রাধিকার দেই, কিন্তু এখানে মূল নীতি হল স্বেচ্ছায়, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন। আমরা সবাই জানি, মিয়ানমারের পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে, ভালোর দিকে নয়।"
তিনি বলেন, "এক্ষেত্রে আমাদের বাংলাদেশ সরকার এবং শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্থিক, রাজনৈতিক এবং নীতিগত সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে।"
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, "বাংলাদেশে আমাদের দেওয়া ৫০ শতাংশের বেশি সাপোর্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন সম্পর্কিত। আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলেও মিয়ানমানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনকে বিলম্বিত করছে। রোহিঙ্গা সংকটের শেষ ও একমাত্র সমাধান হচ্ছে তাদের মর্যাদা ও নিরাপদে প্রত্যাবর্তন।"
সভায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।