৪০ বছরে যে কাজ হয়নি, তা ৪ বছরে শেষ করেছি: মেয়র তাপস
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ঢাকায় গত ৪০ বছরে যে কাজ হয়নি- তা গত ৪ বছরে তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে দায়িত্বে নেওয়ার পর শেষ করেছেন।
মেয়র তাপস বলেন, "আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় মাত্র ২৪টি অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল। গত চার বছরে আমরা নতুন ৪১টি অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ করেছি। বাকি ওয়ার্ডগুলোতেও অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।"
রোববার (১৯ মে) ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবনে মেয়র তাপসের দায়িত্বভার গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত 'উন্নত ঢাকার উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ৪ বছর' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বলেন, "ঢাকা দক্ষিণের জলাবদ্ধতা সমস্যা ৭০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।"
তিনি বলেন, "দায়িত্বভার গ্রহণের প্রথম দিন হতেই করপোরেশনের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতি, অনিয়ম, দুর্নীতি দূর করার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমি শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছি। দায়িত্ব পালনে অবহেলা, গাফিলতি ও দুর্নীতির দায়ে গত চার বছরে বিভিন্ন স্তরের ৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।"
একইসঙ্গে করপোরেশনের প্রাত্যহিক কার্যক্রম সম্পাদনে জনবলের যে তীব্র সংকট ছিল তা উত্তরণে গত চার বছরে ভারী গাড়ির ১৪৩ জন চালক, ৬৬ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী, ৭৭ জন হিসাব সহকারী, ২৭ জন রেভিনিউ সুপারভাইজার, ৩১ জন পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক, ২০ জন স্প্রে-ম্যান সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন বিভাগে সর্বমোট ৮৭৯ জন জনবল নিয়োগ দেওয়াসহ ২১৭ জনের নিয়োগ কার্যক্রম বর্তমানে চলমান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মেয়র বলেন, "বৈশ্বিক করোনা মহামারির সংকটকালে আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করি। তথাপি করোনা মহামারির মাঝেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে প্রায় সকল খাতেই আমরা আমূল পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হই।"
"একটি উন্নত, বাসযোগ্য ঢাকা বিনির্মাণে বিগত চার বছরে করপোরেশনের বিভিন্ন খাতে বিদ্যমান অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে সুশাসন নিশ্চিত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন সাধন, আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলসহ মান্ডা, শ্যামপুর, জিরানি ও কালুনগর খাল পুনরুদ্ধার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে উদ্যোগ গ্রহণ, বছরব্যাপী সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন, ঢাকার সচলতা আনয়নে বহুমাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, দশকের পর দশক ধরে চলা দখল সাম্রাজ্যের অবসান ঘটানো, প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ-উদ্যান-কাঁচাবাজার, গণশৌচাগার প্রতিষ্ঠা, জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং সর্বোপরি ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ঢাকাকে বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে নানাবিধ কর্মকাণ্ড পরিচালন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং তা অব্যাহতভাবে চলমান রয়েছে।"
মেয়র আরও বলেন, "দায়িত্বভার গ্রহণের পর মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ঢেলে সাজাতে আমরা সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেই। সেলক্ষ্য বাস্তবায়নে ২০২০ সালের ৬ জুন আমরা বছরব্যাপী সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু করি। বর্তমানে সূচি অনুযায়ী সারাবছরই আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছি।"
"শুধু তাই নয়, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বেগবান করতে আমরা নতুন মশককর্মী নিয়োগ দিয়েছি। পূর্বে ৪২৪ জন মশককর্মী এই কার্যক্রম পরিচালনা করতো। বর্তমানে ১,০৫০ মশককর্মী ও মশক সুপারভাইজার নিয়মিতভাবে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। একইসঙ্গে আমরা প্রয়োজনীয় যান-যন্ত্রপাতিও বৃদ্ধি করেছি।"
তিনি বলেন, "আমার দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্বে ৫৫১টি ফগার মেশিন, ৪৩১টি হস্তচালিত মেশিন ও ১৭টি হুইলব্যারো মেশিন দিয়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। গত চার বছরে আমরা নতুন আরও ৫৩৫টি ফগার মেশিন, ৬০০টি হস্তচালিত মেশিন ও ২৯টি হুইলব্যারো মেশিন ক্রয় করেছি।"
"এছাড়াও, বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার আলোকে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময়, করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (এক হাজার ৮৬টি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা), মসজিদ-মন্দির, থানা ও পুলিশ ফাঁড়িসহ সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিয়ন্ত্রণ অভিযান পরিচালনা, কোনো ওয়ার্ডে সপ্তাহে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হলে সে ওয়ার্ডকে লাল এলাকা (রেড জোন) চিহ্নিত ঘোষণা করে চিরুনি অভিযান পরিচালনা, কর্পোরেশনের ১০টি অঞ্চলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।"
তাপস বলেন, "একটি বিষয় সকলের কাছে পরিষ্কার করতে চাই। আমাদের কাছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ডেঙ্গু রোগীর প্রাত্যহিক যে তথ্য সরবরাহ করা হয়, করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে আমাদের সম্মানিত কাউন্সিলরবৃন্দ, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাগণ ও মশকর্মীরা সে ঠিকানা পরিদর্শন করে এবং ডেঙ্গু রোগীর বাসস্থল ও চারপাশের ৩০০ গজ এলাকায় বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে থাকে।"
"কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সরবরাহকৃত তথ্যে নানাবিধ অসঙ্গতি থাকে। ফলে এডিস মশার প্রজননস্থল নিধন কার্যক্রমে আমাদের সময়ক্ষেপণ হয় এবং প্রকৃত রোগী খুঁজে বের করতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়। তারপরও আমাদের গভীর তদারকির ফলে আমরা সকল রোগীর বাসাবাড়ি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকি। এমন একজন রোগীও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার বাসাবাড়িতে আমরা যাইনি এবং এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা হয়নি," বলেন তিনি।
মেয়র বলেন, "এভাবে যাচাই-বাছাই শেষে গত বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৯,৭৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী পেয়েছি (তখন সারাদেশে রোগী ছিল দুই লাখ ৭১ হাজার ১৭৫ জন), যা সারাদেশের মাত্র ৩.৬ শতাংশ।"