উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ: টিআইবি
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। একইসঙ্গে, প্রতি চারজন প্রার্থীর একজন ঋণগ্রস্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআইবির বিশ্লেষণ থেকে আরও জানা যায়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদ প্রার্থীদের প্রায় ৭১ শতাংশই ব্যবসায়ী। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি রয়েছেন ১০৫ জন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় এবার কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে।
এছাড়াও, মোট প্রার্থীর ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
রোববার (১৯ মে) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানায় সংস্থাটি।
আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ মে) ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হবে।
টিআইবি আরও জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ১৫৭ উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান মিলে মোট ১,৮১১ জন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২৩৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ১৬৭ জন, নারী ভাইস চেয়ারম্যান ৬০ জনসহ মোট ৪৬২ জন প্রার্থী ঋণগ্রস্ত।
টিআইবি জানায়, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৫ বছরে চেয়ারম্যান প্রার্থীর আয় বেড়েছে প্রায় ১১,০০০%। এক্ষেত্রে দেখা যায়, অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ১১,৫০০%, স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির হার ১২,৪০০%।
এছাড়া জানানো হয়, ৩১০.৯৪ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে ঋণগ্রস্ত প্রার্থীর তালিকার শীর্ষে আছেন নেত্রকোণার পূর্বধলার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আসাদুজ্জামান। দ্বিতীয় অবস্থানে ৯৯.১৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে রয়েছেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান।
৩৫.৮৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন পিরোজপুরের নেছারাবাদের ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. সোহাগ মিয়া।
টিআইব জানায়, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের মতো দ্বিতীয় ধাপেও আলোচনায় আছেন মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের মনোনয়ন। এ ধাপের লড়াইয়ে চেয়ারম্যান পদে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন রয়েছেন ১৭ জন।
টিআইব জানায়, প্রথম ধাপে পেশা হিসাবে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৭০ শতাংশই ছিলেন ব্যবসায়ী, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রায় ৬৭ শতাংশ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ২৪ শতাংশ ব্যবসাকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন।
দ্বিতীয় দাপে ১৬০টি উপজেলার মধ্যে ১৫৭টির প্রার্থীর হলফনামা নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেছে। প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া ৮ ধরনের তথ্যের বহুমাত্রিক ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. মো ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অধিকাংশ প্রার্থী ক্ষমতাসীন দলের। অনেকেই ক্ষমতাসীনদের আত্মীয় স্বজন। প্রার্থীদের মধ্যে পুরুষের অধিক্য রয়েছে। ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য একই রকম। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ব্যবসায়ী। বিশেষ করে, চেয়ারম্যান প্রার্থীদের হলফনামায় যেসব তথ্য রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
তিনি বলেন, "যতটুকু আছে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। রাজনীতির সঙ্গে সম্পদ বৃদ্ধির একটি যোগসূত্র দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতা ও আয় বৃদ্ধির সঙ্গে রাজনীতির সরাসরি সম্পৃক্ততা দেখা যাচ্ছে। যে কারণে দলীয় শৃঙ্খলা
বজায় রাখতে পারছে না।"
টিআইবি মনে করে, সার্বিকভাবে প্রার্থীদের ৪২.৪৯ শতাংশ আয় দেখিয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে, অর্থাৎ করযোগ্য আয় নেই তাদের। সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় দেখিয়েছেন ১০ শতাংশ প্রার্থী। চেয়ারম্যান ও অন্যান্য প্রার্থীদের মাঝে উল্লেখযোগ্য আয় বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ২৩.৬২ শতাংশের আয় সাড়ে ১৬ লাখ টাকার ওপরে। অন্যান্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে এটি মাত্র ৩.২৫ শতাংশ। আবার, চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ২১ শতাংশের আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকার নিচে, অন্যান্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এ হার ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ চেয়ারম্যান পদে অপেক্ষাকৃত ধনীরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
৬.৪৫ শতাংশ প্রার্থীর কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে। প্রায় ৩ গুণ হয়েছে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা। প্রায় ২৫ শতাংশ প্রার্থীর ঋণ কিংবা দায় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩১০.৯৪ কোটি টাকা ঋণ একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর। প্রার্থীদের ১৩.১৩ শতাংশ বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচিত হননি– এমন প্রার্থীদের গত ৫ বছরের আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, অনির্বাচিতদের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে নির্বাচিতদের আয়। অর্থাৎ, ক্ষমতায় থাকার সঙ্গে দ্রুত আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এক্ষেত্রে শুধু নির্বাচিতদের নিজেদেরই নয়, তাদের স্ত্রী/স্বামী ও নির্ভরশীলদের আয় ও সম্পদ বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। আবার যেসব জনপ্রতিনিধি দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন— তাদের আয় ও সম্পদ বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতাও স্পষ্ট হয়েছে বিশ্লেষণে।