২০২৫ অর্থবছরের এডিপি: বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায়
বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের চেয়ে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার প্রকল্পের ওপর এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার; যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অনুমোদিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (এনইসি) অনুমোদন পাওয়া ২০২৫ অর্থবছরের এডিপিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে, চলতি ২০২৪ অর্থবছরের এডিপির চেয়ে নতুন এডিপিতে বরাদ্দ বেড়েছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার প্রকল্পগুলোতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সরকার এখন এই সক্ষমতার সুফল ছড়িয়ে দিতে সঞ্চালন ও বিতরণ প্রকল্পের ওপর জোর দিচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার ইতোমধ্যে অনেক এগিয়েছে। এ কারণে এখন সরকারের পলিসি হলো, উৎপাদন যতটা পারা যায় বেসরকারিভাবে করা।"
তিনি বলেন, "সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে। এই সক্ষমতার সুফল ছড়িয়ে দিতে সরকার এখন সঞ্চালন ও বিতরণের প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে এবং সেগুলো বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে।"
এদিকে, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, "বিদ্যুতের উৎপাদন, সঞ্চালন বা বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে এখন বরাদ্দ বাড়ানো ঠিক হবে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ হলে, বিদ্যুতের মূল্য বাড়বে। আর জনগণকে বাড়তি মূল্য দিতে হবে। এটি জনগণের ওপর জুলুম করা হয়ে যাবে।"
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ অর্থবছরের এডিপিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৯,৭০৭.৮৯ কোটি টাকা; সঞ্চালন লাইন প্রকল্পগুলোতে ১১,৭১৬.৪৩ কোটি টাকা এবং বিতরণ ব্যবস্থার চলমান প্রকল্পগুলোতে ১০,৬৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এডিপি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি ২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় আগামী ২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে ৬ শতাংশ বা ১২৫৯.৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ কমেছে উৎপাদনের প্রকল্পগুলোতে। এছাড়া, চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় এই প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ কমেছে ১১.৫ শতাংশ।
এদিকে, ২০২৫ অর্থবছরের এডিপিতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১১ শতাংশ এবং মূল এডিপির তুলনায় ১৫.৭৮ শতাংশ বেড়েছে।
এছাড়া, চলতি অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির তুলনায় আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে বরাদ্দ বেড়েছে ৩৪.৮ শতাংশ। এটি অবশ্য চলতি ২০২৪ অর্থবছরের মূল এডিপির চেয়ে ৫.৮ শতাংশ কম।
প্রকল্প ও বরাদ্দের পরিমাণ
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপদান খাতের সবচেয়ে বড় প্রকল্পে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নতুন এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১০,৫০২.৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় এ প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়েছে ৭৯৬ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় নতুন এডিপিতে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়লেও কমেছে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে। এই প্রকল্পে বরাদ্দ কমেছে ৩,১৫৪ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে জন্য প্রকল্পটিতে ৬,১০৫.৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, সঞ্চালন লাইনের চলমান ১৪ প্রকল্পের মধ্যে বড় আকারের বরাদ্দ বেড়েছে পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে। এই প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায়, নতুন এডিপিতে বরাদ্দ ১,৮৯১.১০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩,৬১৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
এছাড়া, বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়কৈর ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্পে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২,৪৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৮৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের জন্য সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পে।
এদিকে, বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে ১,৩০৫ কোটি টাকা, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে ৩,০১৭.৬২ কোটি টাকা, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে (ডিপিডিসি) ৪,৩৯০.৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।