সিলেটে বন্যার পানি কিছুটা কমছে, ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় এ বিভাগের নদনদীগুলোর পানি কিছুটা কমেছে। উজানের ঢল থামায় সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতেও বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে গ্রামাঞ্চলের পানি কমলেও– সিলেট শহরে পানি বাড়ছে।
ঢলের পানি সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর দিক থেকে আসায় নগরের পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিস্টরা।
গ্রামাঞ্চলে পানি কমতে শুরু করায় ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। বিশেষত বন্যার পানিতে গ্রামীণ সড়কগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে। এছাড়া কৃষিতেও বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে এই বন্যা।
উজান থেকে থেমে আসা ঢলের কারণে মঙ্গলবার থেকে সিলেটে পানি বাড়তে শুরু করে। বুধবার এক রাতেই তলিয়ে যায় জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট – এই পাঁচ উপজেলা। বৃহস্পতিবার রাতে বিয়ানীবাজার এবং জকিগঞ্জ উপজেলাও পানি প্লাবিত হয়ে পড়ে। শুক্রবার সকাল থেকে ডুবতে শুরু করে সিলেট নগরীর অনেক এলাকা। শনিবার দুপুর পর্যন্ত শহরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সিলেট শহরের অনন্ত ১৫টি এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের ১৩ উপজেলার মধ্যে ৭টি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৭ উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন। বন্যা মোকাবেলায় এপর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৪৭টি। আর আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ৩ হাজার ৩৪২ জন।
এদিকে, পানি বাড়ায় সিলেট নগরীর ১৫নং ওয়ার্ডের কিশোরী মোহন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও পাশ্ববর্তী একটি পাঁচতলা খালি ভবন ও একটি কলোনীতে শুক্রবার বিকেলে আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছে সিটি করপোরেশন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এপর্যন্ত ৪০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, "নগরীতে বন্যায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার পরিবার। সিলেট শহরের ১৫, ২২ ও ২৪ নং ওয়ার্ডের প্রায় ১৫টি এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।"
সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরান বলেন, "বন্যার পানি শহরের দিকে ধেয়ে আসছে। বন্যা মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি আমরা।"
গত ২৪ ঘন্টায় নদনদীর পানি কিছুটা কমেছে জানিয়ে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, "বৃষ্টি ও ঢল কমায় নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢল নাহলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে। এ রকম আবহাওয়া থাকলে আগামী ৭/৮ দিনের মধ্যে পানি পুরোপুরি নেমে যাবে।"
ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন
বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর একটি গোয়াইনঘাট। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের লাগোয় এ উপজেলার প্রায় ৭০ শতাংশ তলিয়া যায় পানিতে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে পানি কমতে শুরু করে। ইতোমধ্যে গোয়াইনঘাটে তিনটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ নেমে এসেছে। তবে পানি কমার সাথেসাথে স্পষ্ট হচ্ছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল গোয়াইনঘাট-জাফলং ও সারি-গোয়াইনঘাট সড়ক। এই দুই সড়কের পানি নেমেছে। তবে ঢলে একেবারে চৌচির করে দিয়েছে পুরো সড়ক। অনেক জায়গায় সড়ক ভেঙে বড় বড় গর্তেরও সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া গ্রামীণ সবগুলো সড়কই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: তৌহিদুল ইসলাম বলেন, "বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যাবে। তবে যেসব সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে– তা দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে এলজিইডি'র উপজেলা প্রকৌশলীকে নির্দেশ দিয়েছি।"
সীমান্তবর্তী আরেক উপজেলা কানাইঘাটের পানিও শুক্রবার থেকে কমতে শুরু করে। যেসব এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে সেসব এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পানি কমার সাথে সাথে ভেঙে পড়ছে কাঁচা ঘর-বাড়ি।
কানাইঘাটের দিঘীরবাক এলাকার দিনমজুর কামাল আহমদের ঘর ভেঙে পড়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, তিনদিন ঘরের ভেতরে পানি ছিল। পানির মধ্যেই পরিবার নিয়ে ছিলাম। এই কষ্ট সহ্য করেছি- ঘরটা রক্ষা করার জন্য। কিন্তু কাল পানি নামার পর ঘরের বেড়াও ভেঙে পড়েছে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, "বানের লাগি এখন কোন কাম (কাজ) নাই। এখন খাইতাম কিলা আর ঘর বানাইতাম কিলা?"
জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, "আপাতত পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার ও তাদের খাদ্য সহায়তা প্রদানেই আমরা মনোযোগ দিচ্ছি। পানি পুরো নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।"
তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে উজান থেকে ভাটির দিকে পানি নামতে থাকায়- সিলেট নগর ও সদর উপজেলায় পানি বাড়ছে।