সেচপাম্পকে সোলারে রূপান্তরের মাধ্যমে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব
দেশের ডিজেল-চালিত সেচ পাম্পগুলোকে সৌরচালিত পাম্পে রূপান্তরের মাধ্যমে অন্তত ৫,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলে জানিয়েছেন জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা।
দেশে বর্তমানে ১৩ লাখ ডিজেল চালিত সেচ পাম্প রয়েছে— যেগুলো একদিকে কার্বন নিঃসরণ করে পরিবেশের ক্ষতি করছে, অপরদিকে এগুলো চালাতে ডিজেল আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপরেও চাপ বাড়ছে।
তবে এসব সেচপাম্পকে সোলারে রূপান্তর করলে ৫,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে; পাশাপাশি সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে যে মোট বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য ও ক্লিন এনার্জি ট্রান্সিশনের পরিকল্পনা নিয়েছে— সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও এটি অনেক বেশি অবদান রাখবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
শনিবার (১ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে 'সেকেন্ড ঢাকা রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যান্ড ফাইন্যান্স টক (ডিআরইএফটি২)-২০২৪'— শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ সব কথা বলেন বক্তারা।
জলবায়ু পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির অর্থায়ন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান 'চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ' এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্থায়নের রূপরেখা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ভর্তুকি পুনঃনির্দেশ সংক্রান্ত দিনব্যাপী চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান।
অনুষ্ঠানের সূচনাপর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা মাননীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ দায়ী না হলেও এর ভুক্তভোগী আমরাই। অন্যান্য দেশের তুলনায় জলবায়ু পরিবর্তনের যে অভিযোজন সক্ষমতা, সেটা আমাদের কম। ফলে প্রতিবছর ক্লাইমেট চেঞ্জ ফান্ডে আমাদের প্রচুর টাকা বরাদ্দ দেওয়া লাগে। "
তিনি বলেন, "এই বিপুল পরিমাণ টাকা আমরা অন্যান্য সেবাখাতে বিনিয়োগ করতে পারতাম, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা করা যাচ্ছে না— যা আমাদের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাকে কঠিন করে তুলছে।"
মন্ত্রী বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে বলেন, আগামী ৭-৮ বছরে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রযুক্তিগত অগ্রগতি গ্রহণ করতে প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের সাথে সাথে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সম্ভবত আগামী বছরে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ ১ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রহণের মাধ্যমে নির্গমন হ্রাসের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞা নির্ধারণ নিয়ে আক্ষেপ করেন মন্ত্রী বলেন, "আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত জলবায়ু অর্থায়নের কোনো সংজ্ঞা নেই, বিনিয়োগ নির্দেশনা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য একটি স্পষ্ট কাঠামোর প্রয়োজন।"
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আব্দুল্লাহ আসিফ আল মৌদি স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশের জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা সমর্থনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়ে তিনি বলেন, "প্রশমন, অভিযোজন এবং বহুমুখী জলবায়ু কর্মকাণ্ডের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শনে বাংলাদেশ একটি অনন্য উদাহরণ।"
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততাকে উৎসাহিত করতে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মনিরা সুলতানা বলেন, "টেকসই জ্বালানি লক্ষ্য অর্জনের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, জমির অভাবের বিষয়টি বিবেচনা করে, রুফটপ সোলার বিশেষভাবে কার্যকর বিকল্প হতে পারে।"
অনুষ্ঠানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য প্রিন্ট ও টেলিভিশন মিডিয়া ক্যাটাগরিতে দুইজন সাংবাদিককে পুরস্কার প্রদান এবং দুইজন সাংবাদিককে বিশেষ সম্মাননা দেয় চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ।