শিক্ষা, কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি
১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী পুরুষের তুলনায় শিক্ষা, কর্মসংস্থান কিংবা প্রশিক্ষণে (নট ইন এডুকেশন, এমপ্লয়মেন্ট অর ট্রেইনিং— এনইইটি) নেই, এমন নারী সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নতুন জরিপে।
বুধবার (৫ জুন) 'সোসিও-ইকোনোমিক অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভে-২০২৩' শীর্ষক জরিপে দেখা যায়, জাতীয় পর্যায়ে পুরুষদের ক্ষেত্রে এনইইটি জনগোষ্ঠী ১০.৩১ শতাংশ হলেও নারীদের মধ্যে এই হার ২৬.৯৪ শতাংশ, যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
জরিপে এনইইটি জনগোষ্ঠী বলতে বোঝানো হয়েছে, যারা এই জরিপ অনুষ্ঠিত হওয়ার আগের ৭ দিনের মধ্যে একঘণ্টার জন্যেও কোনো কর্মে ছিলেন না, পড়াশোনায় ছিলেন না এবং জরিপের আগের ১২ মাসের মধ্যে কোনো বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণও পাননি। জরিপে এমন জনগোষ্ঠীকেই এনইইটি বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে থেকেও ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের নারীরা শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের সুযোগ থেকে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত রয়েছেন।
বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এনইইটি জনগোষ্ঠী রয়েছে ঢাকায়, ৩০.০৩ শতাংশ। এরপরে রয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে; এখানে নারী এনইইটি জনগোষ্ঠীর হার ২৮.১০ শতাংশ।
দেশের বাকি বিভাগগুলোতে এই হার ২২ শতাংশের বেশি।
অন্যদিকে, পুরুষের মধ্যে সিলেটে এনইইটি জনগোষ্ঠী রয়েছে সর্বোচ্চ ১৫.৪০ শতাংশ; এরপরে রয়েছে যথাক্রমে– চট্টগ্রাম (১৩.৪৩ শতাংশ), ঢাকা (১০.৮৫ শতাংশ) এবং ময়মনসিংহ (১০.৬১ শতাংশ)।
পুরুষের মধ্যে এনইইটি জনগোষ্ঠী ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে— খুলনা, রংপুর, রাজশাহী ও বরিশালে।
জরিপে দেখা গেছে, জাতীয় পর্যায়ে পুরুষ ও নারী মিলিয়ে সর্বোচ্চ এনইইটি জনগোষ্ঠী রয়েছে ঢাকায়, ২১.১৭ শতাংশ এবং এরপরে চট্টগ্রামে ২১.০৭ শতাংশ।
জাতীয় পর্যায়ে সর্বনিম্ন এনইইটি জনগোষ্ঠী রয়েছে যথাক্রমে রংপুরে ১৪.২০ শতাংশ এবং রাজশাহীতে ১৫.০২ শতাংশ।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে আলাপকালে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কামাল মুজেরি বলেন, "দেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণ থেকে বেশি বঞ্চিত হচ্ছে। এর কারণ হলো- আমাদের দেশে নারীর এখনো পিছিয়ে। নারীদের পিছিয়ে রেখে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। আবার এটাও সত্য যে, শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়নই উন্নয়ন নয়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, মানবসম্পদের উন্নয়ন না হলে টেকসই উন্নয়ন হবে না।"
তিনি বলেন, "আমাদের দেশের উন্নয়ন হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম-কেন্দ্রিক। অথচ এই দুই বিভাগেই এনইইটি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি। দেখা যায়, বিভিন্ন বিভাগ থেকে জনসংখ্যা উন্নত এলাকায় ভিড় করে। ফলে দেশে অঞ্চল ভিত্তিক বৈষম্য তৈরি হয়।"
"দেশের উন্নয়ন জন্য যেমন সমভাবে প্রত্যেক বিভাগের কর্মসংস্থারের অবস্থা উন্নত করতে হবে— একইভাবে, সবার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে," যোগ করেন তিনি।
জরিপে দেশের শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে। জরিপ অনুযায়ী, দেশে ১০ বছর বা তার বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৫৭.৪১ শতাংশ; যেখানে পুরুষের অংশগ্রহণের হার ৭৩.৭৫ শতাংশ এবং নারীর ৪১.৪১ শতাংশ।
এখানে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রণের ক্ষেত্রে সবেচেয়ে এগিয়ে রাজশাহী, এই বিভাগের অংশগ্রহণ রয়েছে ৬১.১১ শতাংশ। অন্যদিকে, ৫১.৩৭ শতাংশ অংশগ্রহণ নিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে সিলেট।
মোটের ওপর জাতীয় কর্মসংস্থানের হার দাঁড়িয়েছে ৯৬.৭০ শতাংশ, যেখানে পুরুষের অংশগ্রহণের হার ৯৬.৪১ শতাংশ এবং নারীর ৯৭.২১ শতাংশ। এখানেও ৯৭.৪৬ শতাংশ অংশগ্রহণ নিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রাজশাহী। অন্যদিকে, ৯৫.৯০ শতাংশ নিয়ে পিছিয়ে রয়েছে সিলেট।
জরিপ অনুযায়ী, জাতীয় বেকারত্বের হার ৩.৩০ শতাংশ; গ্রামে এই হার ২.৭৬ শতাংশ এবং শহরে ৪.৪৮ শতাংশ। জরিপ বলছে, জাতীয় পর্যায়ে পুরুষদের মধ্যে বেকারত্বের হার নারীদের তুলনায় বেশি, যা ৩.৫৯ শতাংশ। অন্যদিকে, এখানে নারীদের হার ২.৭৯ শতাংশ।
মোট শ্রমশক্তির মধ্যে কৃষিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ কর্মরত রয়েছেন, যা ৪৩.৮৯ শতাংশ। এরপরে রয়েছে যথাক্রমে সেবা (৩৭.০৪ শতাংশ) ও এবং শিল্প খাত (১৯.০৭ শতাংশ)।
৩ খাত মিলিয়ে কর্মরত নারীদের ৫৯.৩৬ শতাংশ কৃষিতে, ২৬.৫৯ শতাংশ সেবায় এবং ১৪.০৬ শতাংশ শিল্পে নিয়োজিত রয়েছেন।