বিএনপিতে রদবদল: ঈদের আগে কমিটি পুনর্গঠন কেন?
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অনেকবারই ঈদের পর আন্দোলনের কথা বলেছে। এবার সেরকম কোনো ঘোষণা না থাকলেও ঈদের আগে দলীয় এবং সহযোগী সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠন করেছে দলটি।
সর্বশেষ (১৫ জুন) শনিবার বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঘটেছে বড় ধরনের রদবদল। উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বেশ কিছু পদে ৩৯ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, জানানো হয়েছে আন্তর্জাতিক বিষয়ক দুটি কমিটি গঠনের কথাও।
এর আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিএনপির চারটি মহানগর কমিটি, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং ছাত্রদলের চারটি নগর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
হঠাৎ করে কমিটিতে নতুন করে পদায়ন ও পুনর্গঠনের কারণ কী? বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একে স্বাভাবিক রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রক্রিয়া বললেও বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতর চলছে নানা জল্পনাকল্পনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বিএনপি নেতা বলছেন, দলীয়ভাবে একে আগামী দিনের আন্দোলনের প্রস্তুতির কথা বলা হচ্ছে। তবে কমিটি বাতিল ও কমিটি পুনর্গঠনের অন্যতম কারণ কমিটি নিয়ে অতীত বাণিজ্য এবং কারও কারও বর্তমান আওয়ামী সরকারের সঙ্গে আঁতাত। সে কারণে তারেক রহমানের বিশ্বস্ত লোকদের মূল নেতৃত্বে নিয়ে আসার একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটিতে যে ৩৯ জনের নতুন পদায়ন হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই আগের কমিটিতে অন্য পদে ছিলেন। সেক্ষেত্রে অনেকেরই পদোন্নতি হয়েছে বলে বিএনপি নেতা-কর্মীরা মনে করছেন।
তারা বলছেন, যারা বাদ পড়েছেন তারা তারেক রহমানের আস্থা হারিয়েছেন। তবে বাদ পড়া নেতাদের কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, সরকারের অব্যাহত নিপীড়ন-নির্যাতনের কারণে তারা দীর্ঘদিন কাউন্সিল করতে না পারার কারণেই কমিটি পুনর্গঠন করছেন।
এমন অভিযোগ নাকচ করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, 'বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। সেটা তারা যখন সরকার পরিচালনা করেছে, তখনো করেনি। দল পরিচালনায়ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।'
তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত আফজাল হোসেন আরও বলেন, 'টেমস নদীর পাড় থেকে তাদের সকল সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত মধ্যরাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আকারে জানানো হয়। অতীতে কাউন্সিল করলেও বিএনপির কমিটি হতো এক ব্যক্তির নির্দেশে। আবার সেই কেন্দ্রীয় কমিটি কখনও কোনো বৈঠকে বসেছে বলে শুনেছেন?'
কিছু কমিটি বাতিল ও কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন ছাড়াও বিএনপি সর্বশেষ যে ১১ সদস্যের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটি ঘোষণা করেছে তাতে তারেক রহমান কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন।
অন্য সদস্যরা হলেন: ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরী, ইসমাইল জবিউল্লাহ, হুমায়ুন কবির (আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক), সিরাজুল ইসলাম (সাবেক অ্যাম্বাসেডর) এবং তাজভিরুল ইসলাম (সভাপতি, কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি)।
এর বাইরে গঠিত ১৮ সদস্যের অ্যাসিসট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপার্সন'স ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটিতে মূলত তরুণরা আছেন। তাদের মধ্যে আছেন শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, অ্যাড. নিপুণ রায় চৌধুরী এবং ইঞ্জি. ইশরাক হোসেন।
সর্বশেষ
শনিবার দুপুরের পর জানা যায়, রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সভাপতি এবং নাসিরউদ্দিন নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ২৬০ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু ছাত্রদল কর্মী বলছেন, নতুন কমিটি পদ পাওয়া নেতাদের জন্য তারেক রহমানের ঈদ উপহার হলেও পদ না পাওয়াদের জন্য এটা গভীর হতাশার।