ঈদে হোটেল-মোটেলে আগ্রিম বুকিং কম, মূল্যস্ফীতিকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা
বিগত বছরগুলোয় ঈদের ছুটির আগে হোটেল-মোটেলে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হলেও এবার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা।
তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষ নিত্যদিনের জীবনযাপনের খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এরমধ্যে ভ্রমণের পরিকল্পনাকে কাটছাঁট করছেন অনেকেই। এ কারণে অগ্রিম বুকিংও কম।
তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে, ঈদের পরেদিন থেকে সরাসরি অনেকে পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে যাবেন বলে আশা ব্যবসায়ীদের। এতে সারাদেশে প্রায় ৫০ লাখ পর্যটক পর্যটন স্পটগুলোয় ঘুরবেন বলে আশা করছেন তারা।।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এ বছর কক্সবাজারে গতবারের তুলনায় হোটেল-মোটেলে অগ্রিম কম বুকিং হয়েছে।
তিনি বলেন, "আমাদের ৩৩ থেকে ৩৫ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। অন্য সময় এটি ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত হয় থাকে।"
কক্সবাজারে ৫০০ এর বেশি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে ২০,০০০ বেশি কক্ষ রয়েছে— যেখানে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার মানুষ প্রতিদিন থাকা যায়।
আবুল কাশেম সিকদার বলেন, "মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের নিত্যদিনের জীবনযাপনের খরচ বাড়ছে। এর ফলে মানুষ ভ্রমণখরচ কমিয়ে দিয়েছে। এর উপর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, উপজেলা নির্বাচন ও ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, সে কারণেও অগ্রিম বুকিং কম হতে পারে। তারপরও আমরা আশাবাদী শেষ মুহূর্তে পর্যটক সমাগম ঘটবে।"
"ঈদের এ ছুটিতে সাধারণত ১০ লাখ পর্যটক আসে। প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখ পর্যটক হয়। অনেকে হোটেলে না থেকে দিনে এসে ঘুরে রাতে চলে যান।"
"পর্যটকদের আনতে এবার প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বিশেষ ছাড় দিচ্ছে। আমরা আশা করছি, পর্যটক আসবে। একটু ঠান্ডা আবহাওয়া থাকায় এখন অনেকেই ফোন দিচ্ছে আগ্রিম বুকিং নেওয়ার জন্য," বলেন তিনি।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশি টিবিএসকে বলেন, "যদিও আগ্রিম বুকিং ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের মতো হয়েছে, ঈদের সময় লম্বা ছুটি থাকে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পর্যটক বাড়বে। সাধারণত, ঈদের ছুটিতে ৫০ লাখের মতো পর্যটক হন সারাদেশে। আমরা এবারও এমনটিই আশা করছি।"
তিনি বলেন, দীর্ঘ ছুটিতে কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, সিলেটের বিভিন্ন এলাকা, রাতারগুল, বিছানাকান্দি, জাফলং, তামাবিল, রাঙামাটি,পতেঙ্গা বিচের পর্যটন স্পটে বেশি ভিড় থাকে।
তিনি আরও জানান, "সেন্টমার্টিনে এখন জাহাজ চলাচল বন্ধ। আমাদের পর্যটক সেখানে নেই। জাহাজ চলাচল সেপ্টেম্বরের শেষে চালু হতে পারে।"
কক্সবাজারে তারকামানের হোটেল রামাদার ফ্রন্ট সুপারভাইজার তপু সিং জানান, ইতোমধ্যে তাদের হোটেলে ৭০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। কোরবানির ঈদকে ঘিরে হোটেলটি বিভিন্ন কম্বো প্যাকেজের মাধ্যমে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ঈদুল আজহার ছুটিতে পর্যটক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওন। বড় বড় ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য যেভাবে প্রস্তুতি দরকার এবারও সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, "আমাদের পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটক কম আসলেও আমাদের নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার থাকবে।"
আপেল মাহমুদ বলেন, "অচিরেই জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের সাথে পর্যটন শহরের নিরাপত্তা জোরদার করতে সমন্বয় সভা করে আরও কঠোরভাবে চুরি-ছিনতাই রোধসহ মাঝে মধ্যে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধ করা হবে।
এদিকে, কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, আরেক জনপ্রিয় পর্যটন স্পট কুয়াকাটায় দেড় শতাধিক হোটেল ও মোটেল রয়েছে।
তিনি বলেন, "কুয়াকাটা এখন আর কুয়াকাটা নেই। ঘূর্ণিঝড় রিমালে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, মানুষ এখনও তা কাটিয়ে উঠতে পারে নি। শনিবার বিচ ম্যানেজমেন্টের মিটিং ছিল। আগ্রিম বুকিংয়ের তেমন কোনো সাড়া নেই এখন পর্যন্ত। কক্সবাজারের এক লাখ পর্যটক হলে কুয়াকাটাতে আসে ১০,০০০।"
বান্দরবান হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, "আমাদের এখানে বুকিং হয়েছে অন্য ঈদের তুলনায় খুবই কম। ৭০টি মতো হোটেল আছে বান্দরবান সদরে। হোটেলে রুম অগ্রিম বুকিং হয়েছে ৩০ শতাংশ। এখানে অন্য সময় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়।"
তিনি বলেন, "ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও পর্যটকদের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে। তবে আমরা আশা করছি, অগ্রিম বুকিং না হলেও সরাসরি অনেকে আসবে ঘুরতে, তখন বুকিং হবে।"
ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিমান বাংলাদেশের অতিরিক্ত ফ্লাইট চালু
ঈদুল আজহা উপলক্ষে যাত্রীদের সুবিধার্থে অভ্যন্তরীণ রুটে শিডিউল ফ্লাইটের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গন্তব্যে ঈদের পূর্বে ২০টি এবং পরে ৯টি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালিত হবে।
দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা, নভোএয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রা। ঢাকা, যশোর, সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল- এই ৮টি রুটে ৪টি ফ্লাইট অপারেটরের প্রতিদিন প্রায় ১৫০টি ফ্লাইট চলাচল করে।
ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং সাপোর্ট অ্যান্ড পিআর) কামরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "কক্সবাজার ঈদের পর দিন থেকে ৭ দিন বুকিংয়ে প্রেসার আছে। প্রায় শতভাগ অগ্রিম বুকিং হয়েছে।"