বিদেশি অর্ডার কমে যাওয়ায় হঠাৎ বন্ধ আশুলিয়ার সোয়েটার কারখানা, দুর্ভোগে শ্রমিকরা
সাভারের আশুলিয়ায় আনজির অ্যাপারেলস লিমিটেডের কর্মী বাবুল মিয়া ঈদের ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে গিয়েছিলেন। ছুটি শেষে আশুলিয়ায় ফিরে এসে দেখেন কারখানা অনির্দষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।
বাবুল বলেন, "ফিরে এসে দেখলাম, বিদেশি কাজের অর্ডার কমে যাওয়ায় কারাখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।"
তবে কর্তৃপক্ষ যে কারণ দেখিয়ে কারখানার বন্ধ করেছে, তা মানতে পারছেন না বাবুল।
তিনি বলেন, "গত দুই বছরে কারখানায় কখনও কাজের অভাব দেখিনি।"
শুধু আবুল নন, সাভারের আশুলিয়ার দেওয়ান ইদ্রিস রোডে ও জিরাবোতে অবস্থিত আনজির অ্যাপারেলস লিমিটেডের প্রায় ৫০০ শ্রমিক চাকরি হারানোর এই সংকটে পড়েছেন।
এদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, বিদেশি কাজ কমে আসায় লোকসানের মুখে সোয়েটার উৎপাদনের কারাখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১২ জুন আনজির অ্যাপারেলস লিমিটেড (ইউনিট– ২ ও ৩) কারখানা কর্তৃপক্ষ নামমাত্র বোনাস দিয়ে ঈদের ছুটি দেয়। অথচ এর আগের তিন মাস— এপ্রিল, মে ও জুনের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়নি।
এর মধ্যে ২২ জুন ঈদের ছুটি শেষে শ্রমিকেরা ফিরলে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার নোটিশ দেখতে পান এবং কারখানার সামনে পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়।
কারখানাটির একাধিক শ্রমিক জানান, বেতন-ভাতা না পাওয়ায় অনেকেই ঈদ করতে গ্রামে যেতে পারেনি। আবার যারা ধার-দেনা করে ভোগান্তি মাথায় নিয়ে গিয়েছেন, ফিরে এসে তাদের দুর্দশাও চরমে পৌঁছেছে।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "শ্রমিকরা ঈদের ছুটি শেষে দূর-দুরান্ত থেকে এসে জানতে পারলো তাদের কারখানা বন্ধ এবং তাদের তিন মাসের বেতন-ভাতা অনিশ্চয়তায়। একটি স্বাধীন দেশে এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?"
"এই অবস্থায় আমরা ৮টি দাবিতে শ্রম মন্ত্রলায়ের সচিব বরাবর এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছি। একইসাথে ফ্যাক্টরির মালিকের বিদেশ পালানোর শঙ্কা থাকায় বিষয়টি নজরে রাখার অনুরোধ করেছি," বলেন তিনি।
এ বিষয়ে কারখানাটির এজিএম মেহেদী হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "জিরাবো ও আশুলিয়ায় দুই কারখানায় আমাদের ৮০০ এর মতো শ্রমিক আছেন, যাদের অনেকের কমবেশি বেতন বাকি আছে।"
তিনি জানান, "বিদেশি কাজ কমে আসায় প্রতিমাসে কারখানার ১ থেকে ১.৫ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছিল। এ কারণে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কারখানা আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। কবে চালু হবে তা বলা যাচ্ছে না।"
যদিও শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন বকেয়ার বিষয়টি ঠিক নয় বলে দাবি করেন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহিদুল্লাহ।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন বকেয়ার দাবিটি সর্বাংশে সত্য নয়। কিছু শ্রমিকের হয়তো চলতি মাসের অর্ধেক বেতন বাকি আছে। তবে কিছু কর্মকর্তাদের কয়েক মাসের বেতন বাকি আছে। এমনকি, গত মাসে ফ্ল্যাট বাসা বিক্রি করেও শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেছি।"
তিনি বলেন, "২৪ বছর ধরে ফ্যাক্টরি চালাচ্ছি, কিন্তু ব্যাংকে এলসি খোলায় সহযোগিতা না পাওয়ায় বিদেশি কনফার্ম অর্ডার, কখনো বাতিল হয়নি। ২০২২ সালেও ২০০ কোটি ডলারের রপ্তানি করি, ২০২৩ সালে সেটি কমে ১৫০ কোটি হয়। আর ২০২৪ সালে ব্যাংকিং খাতের অসহযোগিতায় একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছি।"
"এছাড়া কোনো কোনো সপ্তাহে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়ায় অর্ডার বাতিল হয়েছে। ফলে লোকসান না বাড়িয়ে কারখানা আপাতত বন্ধ রেখেছি। নতুন বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে, সেটি হলেই সুদিন ফিরবে," যোগ করেন তিনি।
এদিকে রোববার (২৩ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আনজির অ্যাপারেলস লিমিটেডের বন্ধ ঘোষণার নোটিশকে 'বে-আইনি' আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শ্রমিকরা। এ সময় ৫০০ শ্রমিকের তিন মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করার পাশাপাশি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানান তারা।
তাদের ৮টি দাবির মধ্যে রয়েছে— হাজিরা বোনাস পরিশোধ; আইন অনুযায়ী ছুটি ভোগ করার অধিকার; কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করলে শ্রম আইন অনুযায়ী পাওনাদি পরিশোধ করা; বাৎসরিক ছুটির টাকা দেওয়া; মাতৃত্বকালীন ছুটির টাকা দেওয়া; শ্রমিকদের বহিরাগত মাস্তান দিয়ে ভয়ভীতি না দেখানো।