নামমাত্র কর দিয়ে চুরি করা টাকা বৈধ করার প্রস্তাব অযৌক্তিক: সংসদে জিএম কাদের
চোরকে চুরি করার সুযোগ দিয়ে, আবার প্রস্তাবিত বাজেটে নামমাত্র কর আরোপ করে সেই চুরির টাকা বৈধ করার প্রস্তাব অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।
তিনি বলেন, 'একজন সাধারণ করদাতা দেবে ৩০ শাতাংশ। আর একজন চুরি করা টাকায় মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করবেন, এটি অবাস্তব প্রস্তাব। চোরকে চুরি করার সুযোগ দিয়ে, আবার নামমাত্র কর দিয়ে সেই চুরি করা টাকা বৈধ করার প্রস্তাব অযৌক্তিক । এসব টাকা বৈধ করার জন্য সর্বনিম্ন ৫০-৬০ শতাংশ করা নির্ধারণ করার উচিত।'
শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, 'এর আগেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এবারের প্রস্তাবের নতুনত্ব হলো, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না। যদিও খবরে বলা হচ্ছে, বিভিন্ন সময় এ সুযোগ দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত মাত্র চার হাজার কোটি টাকার মতো কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। যা খুবই নগন্য।'
এছাড়াও দেশের অর্থনীতি এখনো প্রতিদিন নিম্নগামী বলে মনে করেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাপী কভিড মহামারির প্রকোপ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি কারণে বিশ্বে বড় ধরনের অর্থনেতিক মন্দার ধাক্কা লেগেছিল। ধীরে ধীরে প্রায় সব দেশই এর থেকে উত্তরণে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। আমাদের অর্থনীতি প্রতিদিন এখনও নিম্নগামী। উত্তরণ তো দূরের কথা, অধঃপতন ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে অস্থির চিত্র তার কিছু কারণ হলো- বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি, টাকার বিনিময় হারের পতন, সীমিত রপ্তানির প্রবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, সরকারের সংকুচিত আর্থিক ক্ষমতা, এডিপি ব্যয়ের হ্রাস, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান চাপ, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ঋণের ওপর অতি নির্ভরশীলতা, বিদেশি বিনিয়োগের পতন, বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস।
জিএম কাদের বলেন, 'কোনো দেশের রিজার্ভকে নিরাপদ মাত্রায় রাখতে হলে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ রাখতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের রিজার্ভ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেমে এসেছে বলা যায়। রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় যতক্ষণ না দেশের মোট আমদানি ব্যয়ের সমান বা বেশি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত রিজার্ভের ক্রমাবনতি অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যে আইএমএফের ঋণের ছাড় ও অন্যান্য বিদেশি সাহায্য বা অন্যান্য ঋণের অর্থে হঠাৎ রিজার্ভ বৃদ্ধি হতে পারে। কিন্তু এ রিজার্ভ আবার কমতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না রপ্তানি ও প্রবাসী আয় আমদানি ব্যয়ের চেয়ে বেশি থাকবে।'
প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে একটি গতানুগতিক বাজেট বলেও উল্লেখ করেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, 'এর আগের চার-পাঁচ বছরের বাজেটে যে ধরনের ধ্যান-ধারণার ওপর ও যে প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়েছিল, যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছিল, মোটামুটি সে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে।'