সাপের কামড়ে মৃত ব্যক্তিকে সুস্থ করার কথা বলে টাকা নিয়ে পালালো ওঝা, মধ্যরাতে লাশ দাফন
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সাপের কামড়ে শনিবার সকালে মৃত্যু হয় সাইফুল ইসলাম (৪০) নামে এক টাইলস মিস্ত্রির। তাকে সুস্থ করে তোলার আশ্বাস দিয়ে মৃত ব্যক্তির স্বজনদের কাছ থেকে ১৫,০০০ টাকা নিয়ে পালিয়েছেন দুই ওঝা। পরে মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষার পর, ওঝারা ফিরে না আসায় লাশ দাফন করে পরিবার।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম নাসিম।
বিজ্ঞানের এমন উৎকর্ষের মধ্যেও বাংলার সিনেমার মতো চলেছে আয়োজন। সাপে কাটা রোগীকে বাংলা সিনেমায় যেমন ওঝা দিয়ে কড়ি চালান দিয়ে ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা হয়, ঠিক তেমনি আয়োজন করা হয়েছিল গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাসুরা গ্রামে।
কিন্তু বাংলা সিনেমায় ওঝার চিকিৎসায় বেহুলার লখিন্দর সুস্থ হলেও কালিয়াকৈরের বাসুরা গ্রামের মৃত সাইফুল সুস্থ হতে পারেননি। সব আয়োজনের পর গ্রামবাসীকে হতাশ করে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে কড়ি আনার কথা বলে গা ঢাকা দিয়েছে ওঝারা।
ওঝার জন্য শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও তারা ফিরে না আসায় পরে মধ্যরাতেই লাশ দাফন করা হয়।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর সাপের কামড়ে শনিবার সকালে টাইলস মিস্ত্রি সাইফুল ইসলামের মৃত্যুর পর তাকে সুস্থ করে তুলতে সন্ধ্যায় ওঝা দিয়ে চিকিৎসা করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এতে এলাকায় তৈরি হয় ব্যাপক চাঞ্চল্য।
সাপের কামড়ে মারা যাওয়া সাইফুল গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাসুরা গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে।
স্থানীয় সূত্র ও মৃত সাইফুল ইসলামের স্বজনেরা জানান, সাইফুল ইসলাম গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রতিবেশীদের সঙ্গে টর্চলাইট দিয়ে আলো জ্বালিয়ে টেঁটা দিয়ে বাড়ির পাশের বিলে মাছ ধরতে যান। পথে হঠাৎ একটি বিষধর সাপ সাইফুলের বাঁ পায়ে কামড় দেয়। পরে তার সঙ্গে থাকা অন্যরা টেঁটা দিয়ে আঘাত করে ওই বিষধর সাপটি মেরে ফেলেন। তারপর মৃত সাপটি নিয়ে সাইফুল ও সাথের লোকজন বাড়িতে ফিরে ঘটনাটি পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসীকে জানান।
ঘটনা জেনে সাইফুলের স্বজনেরা প্রথমে তাকে ওঝার কাছে নিয়ে যান। ওঝা ঝাড়ফুঁক দিয়ে সুস্থ করতে না পারলে পরিবারের লোকজন রাতেই তাকে টাঙ্গাইল জেলা মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, শনিবার বিকালে মৃত সাইফুলের গোসল শেষে কাফনের কাপড় পরিয়ে জানাজার নামাজ পড়ার আয়োজন করা হয়। এ সময় কয়েকজন ওঝা এসে তাকে চিকিৎসা করে ভালো করা সম্ভব বলে দাবি করেন।
ওঝাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জানাজার নামাজ পড়া বন্ধ রেখে পুনরায় ওঝাদের দিয়েই চিকিৎসা (ঝাড়ফুঁক) করানোর আয়োজন শুরু হয়।
দুই ওঝা মৃত সাইফুলকে পরীক্ষা করে কি কি করতে হবে, এসব বিষয় জানিয়ে কড়ি ক্রয় করতে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মানিকগঞ্জ যান। কড়ি নিয়ে ফিরে আসলে রাত ১০টার দিকে ঝাড়ফুঁক শুরু হবে বলে জানান তারা। কিন্তু তাদের অপেক্ষা আর শেষ হয়নি।
রাত ১০টা পেরিয়ে ১২ বেজে গেলেও ওঝারা আর ফিরে আসেননি। পরে হতাশ ও ক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী মধ্যরাতে ধর্মীয় রীতি মেনে জানাজার নামাজ শেষে লাশ দাফন করেন।
মৃত সাইফুলের ভাই আলী হোসেন বলেন, "কলাগাছ, দুধ, নতুন সিলভারের কলসিসহ অনেক কিছুর ব্যবস্থা করেছিলাম ওঝাদের কথা মতো। পরে তারা জানায়, চিকিৎসার জন্য কড়ি লাগবে। কড়ি আনতে গিয়ে তারা আর ফিরে আসেনি। গ্রামবাসী ও সবার পরামর্শে রাতে জানাজা শেষে ভাইয়ের দাফন করেছি।"
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম বলেন, "শুক্রবার রাতে সাপের কামড়ে আহত এক ব্যক্তি শনিবার সকালে মারা যান। শনিবার বিকালে দাফনের কথা থাকলেও কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাসের কারণে স্বজনেরা ওঝার ওপর বিশ্বাস করেন।"
তিনি বলেন, "শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা লাশ ধরতে দেননি। ওঝা নাকি তাদের বলে গেছেন, চিকিৎসা শেষ করার আগ পর্যন্ত এই লাশ ধরা যাবে না।"
শেষে ওঝারা ১৫ হাজার টাকা নিয়ে কড়ি আনার কথা বলে গিয়ে আর ফিরে না আসলে স্বজনেরা মধ্যরাতে লাশ দাফন করেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।