সিলেট ও সুনামগঞ্জে ফের পানি বাড়ছে, প্লাবিত নিম্নাঞ্চল
সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে পানি বাড়তে থাকায় ফের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবারও বাড়তে শুরু করেছে এই দুই জেলার নদ-নদীর পানি। ইতোমধ্যে কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
এরইমধ্যে আগামী ৭২ ঘণ্টা সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে অতিভারী বৃষ্টির পূর্ভাবাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢলের কারণে আজ সোমবার (১ জুলাই) সকালেই সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এছাড়া, টানা কয়েকদিন কমার পর শনিবার থেকে কেবল কুশিয়ারা নদী ছাড়া সিলেট ও সুনামগঞ্জের বাকি সবগুলো নদনদীর পানিই বাড়ছে।
এদিকে, পানি বেড়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট এবং সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি উঠে বন্ধ হয়ে গেছে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কে যান চলাচল। এ বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার লোকজন।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং এলাকার বাসিন্দা রাইসুর ইসলাম বলেন, "একমাসে ঘরে দুই বার পানি উঠেছে। প্রায় এক সপ্তাহ পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। কয়েক দিন আগেই মাত্র ঘরে ফিরেছি। এখনও সবকিছু গুছাতে পারিনি। এরমধ্যে আজ সকালে উঠানে পানি উঠে গেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে রাতের মধ্যেই ঘরে ঢুকে যাবে।"
তিনি বলেন, "পানির কারণে খুব যন্ত্রণার মধ্যে আছি। যাযাবরের মতো জীবন কাটাচ্ছি। আর ঘরে পানি ওঠার যে কী যন্ত্রণা, তা যার ঘরে ওঠে একমাত্র সেই জানে।"
সিলেট জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মূলত মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির কারণেই এ অঞ্চলে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। চেরাপুঞ্জিতে ২৮জুন থেকে ১ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত— এই ৩দিনে ৬৪০মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সোমবার থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত— এই তিনদিনে আরও ৯৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, "ঢলে এ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই উপজেলাবাসীকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করছি। এছাড়া, যে সকল ঘর বাড়িতে বন্যার পানি ঢোকার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদেরকে সময় নষ্ট না করে এখনই নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।"
তিনি বলেন, উপজেলায় মোট ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোট ৪৭টি নৌকা মাঝিসহ প্রস্তুত রাখা আছে।
রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৩৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত আরও বেড়েছে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এ অঞ্চলের ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, রোববার বিকেল চারটা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
এ বিষয়ে সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, "সিলেটে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া মেঘালয়েও আগামী ৭২ ঘণ্টায় অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে।"
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে, সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। রোববার সন্ধ্যায় বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৯০৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় ৬৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে ২১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে লোক উঠেছেন। তবে সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন নেই।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, "গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ১৮৬ মিলিমিটার। এদিকে সারারাত সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হওয়ায় কারণে উজানের পানিতে সীমান্তের নিচু সড়ক প্লাবিত হয়েছে। এতে স্বল্পমেয়াদী বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।"
তিনি জানান, সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ছাতক পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছে ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এছাড়া যাদুকাটা নদীর পানি ৯৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।