পরীক্ষার আগের রাতে মাধ্যমিক শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস
নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় মাধ্যমিক শ্রেণী অর্থাৎ ৬ষ্ঠ, ৭ম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা আজ বুধবার (৩ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে। তবে পরীক্ষার আগের রাতেই (মঙ্গলবার) বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
গত ১ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির সভায় নতুন মূল্যায়ন কাঠামো অনুমোদন দেওয়া হয়।
জানা যায়, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরুর আগের দিন (মঙ্গলবার) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মেইলে প্রশ্ন পাঠায় এনসিটিবি। সেই প্রশ্নের ফটোকপি করে আজ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এমনকি ইউটিউবে এসব প্রশ্নের সমাধানও পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে 'নতুন কারিকুলাম পরিবর্তনে অভিভাবকদের প্রত্যাশা'- নামক গ্রুপে অভিভাবকরা বলছেন, 'শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করার পরিবর্তে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন খোঁজাখুঁজি করছে।'
আরেক অভিভাবক ওই গ্রুপে লিখেছেন, 'আগামীকাল তথাকথিত ষান্মাসিক মূল্যায়ন। অথচ আজ ভার্চুয়াল মাঠে প্রশ্নের গড়াগড়ি।'
অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র 'নৈপুণ্য' অ্যাপের মাধ্যমে দেওয়া হয়, শিক্ষকেরা এটা পরিচালনা করেন। নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অগ্রগতির রেকর্ড রাখার জন্য শিক্ষকরা এই অ্যাপটির অ্যাক্সেস পান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নামী একটি স্কুলের অধ্যক্ষ বলেন, 'আমরা গতকাল ওয়েবসাইটে প্রশ্ন পেয়েছি। আমাদের বলা হয়েছিল, সেই প্রশ্নগুলো প্রিন্ট করে ছাত্রছাত্রীদের দিতে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে পরীক্ষার আগেই শিক্ষার্থীদের হাতে প্রশ্ন এসেছে।'
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বলে, 'আমি প্রশ্ন পাইনি। তবে আমি প্রশ্নগুলোর সমাধান দেখতে চেয়েছিলাম, দেখি ততক্ষণে ইউটিউব উত্তরগুলো সরিয়ে দিয়েছে।'
সপ্তম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী জুনাইরা বলে, 'প্রশ্ন ফাঁসের কথা শুনেছি কিন্তু প্রশ্ন পাইনি। শুনেছি রাত দুটোর সময় এটা প্রকাশ করা হয়েছে।'
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মশিউজ্জামান বলেন, 'প্রশ্নটি গতানুগতিক প্রশ্ন নয়। প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি হয়ত বড় কোনো সমস্যা হতো না, যদি না এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তো। প্রধান শিক্ষকদের আইডিতে প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবে প্রধান শিক্ষকরা ভুল করে সেসব প্রশ্ন শেয়ার করেছেন। এভাবেই এসব প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।'
তিনি আরও বলেন, 'আগামী ৬ জুলাই পরবর্তী পরীক্ষা। আমরা সচেতন হব যাতে প্রশ্নগুলি শুধু প্রধান শিক্ষকরাই পান। প্রধান শিক্ষক ছাড়া অন্য কোনো আইডি ধরা পড়লে আমরা ওই আইডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এ ধরনের পরিস্থিতি ফের তৈরি হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।'
এদিকে নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল ইসলাম চৌধুরী।
বুধবার রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রীর মতে, পরীক্ষায় কী প্রশ্ন আসবে শিক্ষার্থীরা তা জানলেও কোনো সমস্যা হবে না। এখানে ফাঁস করার কিছু নেই। প্রশ্ন ফাঁস করে লাভ নেই। শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে অংশ নিয়ে দক্ষতার স্তর পাস করতে হবে।