সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা
সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল রেখে হাইকোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থীর করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আজ বুধবার (১০ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে।
এ সময় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। আগামী ৪ সপ্তাহ পর এ বিষয়ে ফের শুনানি হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'কোটা যেমন আছে, তেমন থাকবে। আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলায় কোটা বাতিল-সংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্রের ভিত্তিতে যে সব সার্কুলার দেওয়া হয়েছে তাতে কোটা থাকছে না।'
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠার পর রিট আবেদনকারী পক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ থেকে 'নট টুডে' (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেয়া হয়েছিল।পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকেও আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে বলা হয়।
এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী গতকাল (৯ জুলাই) আবেদন করেন। দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানি আজ আপিল বিভাগে ওঠার পর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন।
এ সময় রিট আবেদনকারীরা বলেছিলেন, ৯ম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডের জন্য ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিলুপ্ত করে ১৪ থেকে ২০তম গ্রেডে রাখা হয়েছে, যা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে অপমান করার শামিল।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টের রুলে ঐ পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না — সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
পরবর্তীকালে গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। বলা হয়, সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনরায় বহাল থাকবে।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে আজ সকাল ১০টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সারাদেশে 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোঠা পদ্ধতিকে সংস্কার করা— এ দাবিতে সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে সারাদেশে 'বাংলা ব্লকেড' এর অংশ হিসেবে শাহবাগ অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যথাক্রমে রাজশাহী-ঢাকা ও কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কেবল প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ কোটাকে যৌক্তিক বলে মনে করেন উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছেন।