কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় জাবি, চবি ও শাবিপ্রবিতে অন্তত ৬জন আহত
আজ সোমবার (১৫ জুলাই) ভোরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাস্ট) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (বিসিএল) সদস্যরা হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা।
হামলায় ৬ থেকে ৯ জন আহত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানানো হয়েছে।
এর আগে রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে আসা এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গভীর রাতে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল ও সমাবেশ করেন। বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, "যদি মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা না পায়, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-নাতনিরা এ সুবিধা পাবে?"
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, মধ্যরাতের পর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে জড়ো হওয়া আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের কথিত সদস্যরা হামলা চালায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এ ঘটনায় লাবিব আহসান নামে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিক্ষোভকারীরা দাবি করেছেন, কথিত ছাত্রলীগের সদস্যরা মধ্যরাতের পরে তাদের প্রতিবাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তাদের ওপর হামলা চালালে কমপক্ষে চারজন আহত হয়েছেন।
রাত ১১টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জিরো পয়েন্টে উপস্থিত হন। তারা প্রধানমন্ত্রীর 'রাজাকার' মন্তব্যের সমালোচনা করে স্লোগান দিতে থাকেন। কর্মসূচির আধা ঘণ্টা পর ছাত্রলীগ নেতারা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ এসেছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও দাবি করেন, ছাত্রলীগের লোকজন চারপাশে কিছু ক্রুড বোমা নিক্ষেপ করেছে। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত ছিল না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বায়ক রাসেল বলেন, "আমাদের কর্মসূচি চলাকালীন অতর্কিত হামলা করা হয়। কারা আমাদের ওপর হামলা করেছে তা আমি জানি না। আমাদের চার শিক্ষার্থী আহত হয়েছে; তাদের মধ্যে একজন মেয়েও রয়েছে। ঘটনাস্থলে ক্রুড বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে।"
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পার্থ প্রতিম বড়ুয়া বলেন, "আমি মারামারির পর এখানে এসেছি। কিন্তু আমি শুনেছি যে আন্দোলনকারীরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা তাদের আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করিনি। আমরাও চেয়েছিলাম কোটা ইস্যুতে একটা মীমাংসা হোক। কিন্তু স্বাধীন দেশে 'রাজাকার' স্লোগান দেয়া ঠিক নয়।"
ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ওপর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কথিত হামলার বিষয়ে বলতে গিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক অহিদুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, হামলা হয়েছে বলে তাকে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, "রবিবার রাত ১১টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা হুট করে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভ চলাকালে তারা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। জবাবে ছাত্রলীগের সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে বলে জানা গেছে। এতে ৫ থেকে ৭ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা আমাদের বিক্ষোভ সম্পর্কে আগেই জানিয়েছিল। এই ঘটনা এড়ানো যেত।"
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
এদিকে সোমবার রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের সদস্যরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাস্টের আন্দোলনকারীরা।
হামলায় দেলোয়ার হোসেন শিশির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।