চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর দুই দফায় ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে দুই দফা হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া আন্দোলন বন্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন আটকে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার (১৫ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার ও কাটাপাহাড় সড়কে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন, আজ দুপুর আড়াইটায় শহরগামী শাটল ট্রেন থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন চবির সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিকে তুলে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে জোরপূর্বক ছাত্রলীগের মিছিলে তাকে যুক্ত করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় রাফির ছাত্রত্ব বাতিলের জন্য প্রক্টরের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় ছাত্রলীগের অনুসারীদের।
অন্যদিকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দাবি, তালাত মাহমুদ রাফি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। এরপরও যেহেতু তিনি কোটা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন, তাই তার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অধিকার নেই।
চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পার্থ প্রতিম বড়ুয়া বলেন, 'শাটল ট্রেন আমরা আটকাইনি। এটা হয়তো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হয়েছে। আমাদের অজান্তে কিছু বিষয় ঘটেছে।'
কোটা আন্দোলন চবির সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, 'আমাকে জোর করে ছাত্রলীগের মিছিলে যুক্ত করে নিয়ে আসা হয়েছে। আমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা হয়েছে, আপনারা সবাই দেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আজ বিকাল সাড়ে ৩টায় আমাদের আন্দোলনকে বন্ধ করতে ট্রেন আটকে দেওয়া হয়েছে।'
এর আগে গতকাল রবিবার (১৪ জুলাই) রাত ১১টায় কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে কোটা আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
শিক্ষার্থীরা জানান, চবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শরিফ উদ্দিন ও কনকর্ড গ্রুপের অনুসারী আবিরার শাহরিয়ার নেতৃত্বে সুমন নামের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। পরে তাকে শাহ আমানত হলে নিয়ে যান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা শরিফ উদ্দিন হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, 'এক ছোট ভাইকে মারধর করা হয়েছে শুনে তাকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। এটা কি অপরাধ হয়েছে আমার?'
এদিকে সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে চবি'র প্রক্টর ড. অহিদুল আলম বলেন, 'আন্দোলনকারীরা যদি আদালতের রায় না মানে, তাহলে তাদের বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আমরা আদালতে বাইরে যেতে পারবো না। আর আহত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।'
অন্যদিকে, ক্যাম্পাসে কোটা আন্দোলনকারীদের ছাত্রলীগের হামলা খবর পেয়ে বিকাল সাড়ে ৩টার সময় থেকে নগরীর ষোলশহর স্টেশনে অবস্থান নিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ষোলশহর মূল সড়ক থেকে আন্দোলনরতদের লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোড়া হয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
এরপর থেকে ষোলশহর স্টেশনের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে নগরীর দুই নম্বর গেট ও মুরাদপুরে পুলিশ অবস্থান নিয়েছেন।